বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ দেশের ইতিহাস থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবস ১৭ মার্চ এবং তাঁর শাহাদাত বার্ষিকী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসও।
ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে অস্বীকার করার সমান বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করেন, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি একটি আঘাত।
ড. ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছেন। তিনি জনপ্রশাসন, পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরে (ডিজিএফআই) দ্রুত পরিবর্তন এনেছেন। এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একজন সাবেক অর্থনীতিবিদকে নিয়োগ দিয়েছেন।
মুজিবরের মূর্তি ভাঙলেই কি আন্দোলনকারীরা মুছে ফেলতে পারবে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে থেকে?
ইউনূস সরকারের এই পদক্ষেপগুলো নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, এগুলো স্বৈরাচারী শাসনের লক্ষণ। তাঁরা বলছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত না হয়েও ইউনূস সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে এত দ্রুত পরিবর্তন আনছেন, যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী।
ইউনূস সরকারের সমালোচকরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হচ্ছিল, সেগুলোই এখন ইউনূস সরকার করছে। তাঁরা মনে করেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারিতার অভিযোগ তুলে যে শিক্ষার্থী আন্দোলন হয়েছিল, তার ফলে ক্ষমতায় আসা ইউনূস সরকার এখন নিজেই স্বৈরাচারী আচরণ করছে।
অন্যদিকে, ইউনূস সরকারের সমর্থকরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করতে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা মনে করেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ভরে গিয়েছিল, যা সংশোধন করা প্রয়োজন।
তবে ৮টি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের সমর্থকরাও বিব্রত। তাঁরা মনে করেন, এটি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি অবমাননাকর। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শাহাদাত বার্ষিকী বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা হতবাক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেই দিনটি থেকে বাংলাদেশে জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু ইউনূস সরকারের সিদ্ধান্তে এখন সেই দিনটিও বাতিল হতে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার সমান। তাঁরা বলছেন, একটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতির পিতার স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করছেন। তাঁরা দাবি করছেন, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
অনেকে মনে করছেন, ইউনূস সরকার দেশের ইতিহাস পুনর্লিখনের চেষ্টা করছে। তাঁরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি অবমাননা এবং জাতির পিতার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন।
ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সিদ্ধান্তের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাঁরা মনে করেন, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সেই দেশের পরিচয়। তা মুছে ফেলার চেষ্টা করলে সেই দেশের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতির পিতার অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা করলে তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হবে।
ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা দেশে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউনূস সরকারের উচিত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। তাঁরা বলছেন, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। এতে করে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে এবং জনগণের আস্থাও অর্জন করা সম্ভব হবে।