বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জুতো পরে শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন।
এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খালি পায়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুতো পরেই স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করে শ্রদ্ধা জানান। এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এই দিনটি স্মরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। প্রতিবছর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা এখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এবছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রপতির সঙ্গে স্মৃতিসৌধে যান। কিন্তু তিনি জুতো পরেই স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করেন। এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী, পবিত্র স্থানে জুতা খুলে প্রবেশ করতে হয়।
ড. ইউনূসের এই আচরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, একজন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে এমন আচরণ করা উচিত হয়নি বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।
এই ঘটনা নিয়ে সরকারি কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ড. ইউনূসের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। কেউ কেউ তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব বিবেচনা করে এমন আচরণ করা উচিত ছিল না বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এর মধ্যে ছিলেন শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানীরা।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে অধ্যাপক, সাংবাদিক, ডাক্তার, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখকসহ পূর্ব পাকিস্তানের ২০০ জন বুদ্ধিজীবীদের ঢাকায় একত্রিত করা হয়েছিল। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ এবং শহরের বিভিন্ন স্থানের নির্যাতন সেলে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের রায়েরবাজার এবং মিরপুরের মধ্যে সার্বজনীনভাবে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
নিহত বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা আনুমানিক নিম্নরূপ: শিক্ষাবিদ ৯৯১, সাংবাদিক ১৩, চিকিৎসক ৪৯, আইনজীবী ৪২, অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী) ১৬ জন।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে “বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ” নকশার জন্য একটি জাতীয় স্থাপত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
মহানায়কের অমর স্মৃতি: উত্তম কুমারের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের পুনরাবৃত্তি
২২টি দাখিলকৃত প্রস্তাবনার মধ্যে স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও স্থপতি মোঃ জামী-আল-সাফীর প্রস্তাবিত নকশা নির্ণায়ক-সভা কর্তৃক নির্বাচিত হয়। গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছিল এবং এর সমাপ্তিতে প্রায় তিন বছর (১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯) লেগেছিল।
স্মৃতিসৌধের নকশায় বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। যেখানে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় সেখানে রায়েরবাজারের মূল ইটভাটা ১৭.৬৮মি পুরু, ০.৯১মি উচু এবং ১১৫.৮২মি দীর্ঘ বাঁকা ইটের প্রাচীর রয়েছে। প্রাচীর নিজেই দুঃখ ও দুঃখের গভীরতা প্রদর্শক, যার দুই প্রান্তই নষ্ট হয়ে গেছে।
দেয়ালের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৬.১০মি গুনন ৬.১০মি বর্গাকার জানালা দিয়ে দর্শকরা আকাশ দেখতে পারে। বাঁকা প্রাচীরের সামনে পানির মধ্যে অবস্থিত একটি কালো গ্রানাইট স্তম্ভ যা বিষাদের প্রতিনিধিত্ব করে। সম্পূর্ণ স্থাপত্যটি তৈরি করা হয়েছে লাল ইট দিয়ে, যা নির্যাতনের পর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শরীর থেকে ঝরে পড়া রক্তের চিহ্ন বহন করে।
প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এই স্মৃতিসৌধে জনগণের ঢল নামে। সকাল থেকেই বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সকাল থেকেই জনগণের ঢল নেমেছে স্মৃতিসৌধে। ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করেছেন।
কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জুতো পরে স্মৃতিসৌধে প্রবেশের ঘটনা এই দিনের তাৎপর্যকে ম্লান করে দিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। একজন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এমন আচরণ জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয় বলে সমালোচনা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একজন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এমন আচরণ জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে এমন আচরণ করা উচিত হয়নি।
এই ঘটনা নিয়ে সরকারি কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ড. ইউনূসের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। কেউ কেউ তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন ভুল যাতে না হয় সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। তাঁরা বলছেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত।
পরিশেষে বলা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের মর্যাদা ও তাৎপর্য বজায় রাখতে সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় যথাযথ মর্যাদা বজায় রাখা প্রত্যেকের দায়িত্ব। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন ভুল যাতে না হয় সেদিকে সকলের নজর দেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন