Must-try dishes Zakaria Street Kolkata: কলকাতা শহরের হৃদয়ে যদি কোথাও খাবারের স্বর্গ খুঁজে পাওয়া যায়, তবে তা নিঃসন্দেহে Zakaria Street। এই রাস্তাটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ গলি নয়, বরং এটি খাদ্যপ্রেমীদের জন্য একটি উৎসবের মঞ্চ। বিশেষ করে রমজানের সময় এখানকার খাবারের স্টলগুলো যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। কাবাবের ঝাঁঝালো গন্ধ, বিরিয়ানির সুগন্ধ, আর মিষ্টির মোহনীয় টান—সব মিলিয়ে Zakaria Street-এর ফুড স্টলগুলো আপনাকে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা দেবে। আপনি যদি কলকাতায় থাকেন বা এই শহরে ঘুরতে আসেন, তবে এই রাস্তার কিছু বিখ্যাত ফুড স্টল ভিজিট না করলে আপনার খাদ্যযাত্রা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই ব্লগে আমরা আপনাকে নিয়ে যাব Zakaria Street-এর সেই মাস্ট ভিজিট ফুড স্টলগুলোর খোঁজে, যেখানে স্বাদের সঙ্গে মিশে আছে ঐতিহ্য আর ভালোবাসা। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক এই সুস্বাদু সফর!
Zakaria Street কলকাতার চিৎপুর এলাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক রাস্তা, যেটি নাখোদা মসজিদের কাছাকাছি বিস্তৃত। এই রাস্তাটি শুধুমাত্র খাবারের জন্যই নয়, এর পুরনো দিনের স্থাপত্য আর সংস্কৃতির জন্যও বিখ্যাত। তবে রমজানের সময় এখানে যে পরিবর্তন আসে, তা এক কথায় অসাধারণ। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় ইফতারের জন্য খাবারের মেলা। কাবাব, হালিম, বিরিয়ানি, ফালুদা, শিরমাল—এমন কিছুই বাদ যায় না, যা খাদ্যপ্রেমীদের মন ভরিয়ে না দেয়। এখানকার ফুড স্টলগুলোর বিশেষত্ব হলো, এগুলো প্রায় সবই পরিবারের হাতে পরিচালিত এবং কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। তাই প্রতিটি খাবারে মিশে থাকে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব Zakaria Street-এর সেই সব ফুড স্টল নিয়ে, যেগুলো মিস করা মানে স্বাদের একটা বড় অংশ মিস করা।
কলকাতার সেরা ১০ বনেদি বাড়ির পুজো: ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিলনমেলা
Zakaria Street-এর খাবারের গল্প শুরু হয় শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে। এই রাস্তার নামকরণ হয়েছে হaji জাকারিয়া নামে একজন কুচি মেমন ব্যবসায়ীর নামে, যিনি উনবিংশ শতাব্দীতে এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলে এটি ‘Jacquaria Street’ নামে পরিচিত ছিল। তবে আজ এটি কলকাতার মুঘলাই এবং আওয়াধি খাবারের একটি প্রধান কেন্দ্র। নাখোদা মসজিদের ছায়ায় গড়ে ওঠা এই রাস্তায় রমজানের সময় শতাধিক অস্থায়ী ফুড স্টল বসে, যেখানে মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনও দেখা যায়।
এখানকার খাবার শুধু পেট ভরায় না, মনকেও তৃপ্তি দেয়। প্রতিটি স্টলের পেছনে রয়েছে একটি গল্প—কখনো সেটা ১৫০ বছরের পুরনো রেসিপি, কখনো বা পারিবারিক ঐতিহ্য। রমজান ছাড়াও এখানে সারা বছরই কিছু স্থায়ী স্টল খাবার পরিবেশন করে। তবে রমজানের সময় এটি একটি উৎসবে পরিণত হয়, যেখানে হিন্দু-মুসলিম সবাই একসঙ্গে খাবারের স্বাদ উপভোগ করে। এখন চলুন জেনে নিই Zakaria Street-এর সেই মাস্ট ভিজিট ফুড স্টলগুলোর কথা।
Zakaria Street-এ পা রাখলেই আপনার নাকের সামনে ভেসে আসবে কাবাবের গন্ধ, মিষ্টির সুবাস আর তন্দুর থেকে ভাপ ওঠা রুটির ঘ্রাণ। এখানকার প্রতিটি স্টলের নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে। নিচে কিছু বিখ্যাত ফুড স্টলের কথা বলছি, যেগুলো এখানে এলে মিস করা উচিত নয়।
Zakaria Street-এর খাবারের যাত্রা শুরু করতে চাইলে প্রথম গন্তব্য হতে পারে Adam’s Kebab Shop। এই দোকানটি ১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এবং এর সুতলি কাবাব (Suta Kebab) কলকাতায় একটি কিংবদন্তি। এই কাবাব তৈরি করা হয় গরুর মাংসের পেস্ট আর মশলা দিয়ে, যা লোহার শিকে বেঁধে সুতো দিয়ে আটকে রান্না করা হয়। এটি এতটাই নরম যে সুতো না থাকলে মাংস ছড়িয়ে পড়ে। তন্দুরে ঝলসানো এই কাবাব মুখে দিলে গলে যায়। এছাড়া এখানে বোটি কাবাবও পাওয়া যায়, যা সমান জনপ্রিয়।
Taskeen হলো Zakaria Street-এর আরেকটি জনপ্রিয় নাম। এখানকার মুর্গ চাঙ্গেজি (Murgh Changezi) একটি বিশেষ খাবার, যা মুরগির মাংসকে দই, মশলা আর ক্রিম দিয়ে ম্যারিনেট করে তৈরি করা হয়। এটি গভীর তেলে ভেজে পরিবেশন করা হয় মিন্ট চাটনির সঙ্গে। এছাড়া মাছ প্রেমীদের জন্য রয়েছে মাহি আকবরি (Maahi Akbari)—কাতলা মাছের বড় টুকরো মশলায় মাখিয়ে ভাজা। আর খাবারের শেষে ফালুদা বা লস্যি দিয়ে মুখ ঠান্ডা করতে ভুলবেন না।
যারা গরুর মাংসের ভক্ত, তাদের জন্য Bombay Hotel একটি অবশ্য ভিজিট স্থান। এখানকার বিফ চাঁপ (Beef Chaap) এবং বিফ ভুনা শুধু স্বাদেই নয়, গন্ধেও মন কাড়ে। পাতলা মাংসের টুকরো মশলায় ম্যারিনেট করে ধীর আঁচে রান্না করা হয়, যা মুখে দিলে গলে যায়। এছাড়া এখানে ফিরনিও পাওয়া যায়, যা খাবারের শেষে একটি মিষ্টি সমাপ্তি দেয়।
খাবারের শেষে মিষ্টি না হলে কলকাতার খাদ্যযাত্রা অসম্পূর্ণ। Haji Allauddin Sweets হলো Zakaria Street-এর সবচেয়ে পুরনো এবং বিখ্যাত মিষ্টির দোকান। এখানকার গুলাব জামুন ছোট হলেও স্বাদে অতুলনীয়। এছাড়া আখরোট হালওয়া (Akhrot Halwa) এবং বত্তিশি হালওয়া এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। রমজানের সময় এখানে নতুন নতুন মিষ্টি চেখে দেখার সুযোগও মেলে।
Zakaria Street-এর রাস্তার ধারে ছোট্ট একটি কিয়স্ক, Muradabadi Laziz Kebab, যেখানে মাছ আর মুরগির বিভিন্ন পদ পাওয়া যায়। এখানে মাছের মাথা ভাজা (Fish Head Fry) এবং মুরগি ভাজা অত্যন্ত জনপ্রিয়। মাংস মশলায় মাখিয়ে লালচে করে ভাজা হয়, যা দেখতেও সুন্দর আর খেতেও মজাদার।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা: সুস্থ থাকার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা
Zakaria Street-এর ফুড স্টলগুলো শুধু কাবাব বা বিরিয়ানিতে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে মুঘলাই, আওয়াধি এবং আফগানি খাবারের এক অসাধারণ সম্মিলন দেখা যায়। এখানকার খাবারের তালিকায় রয়েছে:
খাবারের ধরন | বিশেষত্ব | প্রসিদ্ধ স্টল |
---|---|---|
কাবাব | সুতলি, মালাই, খিরি, বোটি | Adam’s, Abdul Hamid |
বিরিয়ানি | গরুর মাংস, আলু সহ কলকাতার স্টাইল | Royal India Hotel, Aminia |
হালিম | মশলাদার, গরুর মাংসের স্বাদ | Sufia, Bashir |
মিষ্টি | গুলাব জামুন, আখরোট হালওয়া | Haji Allauddin Sweets |
রুটি/নান | শিরমাল, বাকারখানি | রাস্তার স্টল |
পানীয় | ফালুদা, লস্যি, রূহ আফজা শরবত | Taskeen, রাস্তার স্টল |
এছাড়া এখানে শেওয়াই (Sevai), লাচ্ছা পরোটা, এবং বিভিন্ন ফলের শরবতও পাওয়া যায়, যা রমজানের ইফতারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
Zakaria Street-এ ফুড ট্রিপে যাওয়ার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে আপনার অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর হবে।
রমজানের সময় সন্ধ্যা ৬টার পর এখানে ভিড় বাড়ে। ইফতারের পর থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত স্টলগুলো সক্রিয় থাকে। তবে হালিমের মতো জনপ্রিয় খাবার চাইলে বিকেল ৫টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া ভালো, কারণ দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
Zakaria Street সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন এবং এম জি রোড থেকে হাঁটা দূরত্বে। গাড়ি নিয়ে যাওয়া এড়িয়ে মেট্রো বা বাস ব্যবহার করাই ভালো, কারণ পার্কিংয়ের জায়গা কম।
Zakaria Street শুধু খাবারের জন্য নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাও। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বাঙালি, অবাঙালি—সবাই একসঙ্গে খাবার উপভোগ করে। রমজানে এখানে প্রায় ১০০টিরও বেশি অস্থায়ী স্টল বসে, যা কলকাতার অন্য কোথাও দেখা যায় না। এছাড়া এখানকার দাম তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। একটি প্লেট কাবাব বা বিরিয়ানি ১০০-৩০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। তবে রমজানের ভিড়ে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
Zakaria Street-এর ফুড স্টলগুলো শুধু খাবার পরিবেশন করে না, এটি একটি ঐতিহ্যের ধারক। Adam’s Kebab Shop-এর সুতলি কাবাব থেকে Haji Allauddin-এর গুলাব জামুন—প্রতিটি স্টলের নিজস্ব গল্প আছে। আপনি যদি খাদ্যপ্রেমী হন, তবে এই রাস্তায় একবার পা রাখতেই হবে। তবে মনে রাখবেন, একদিনে সব চেখে দেখা সম্ভব নয়। তাই পরিকল্পনা করে যান, আর স্বাদের এই উৎসবে নিজেকে ডুবিয়ে দিন। Zakaria Street-এর খাবার শুধু পেট নয়, মনকেও ভরিয়ে দেবে—এটাই এর সৌন্দর্য।
কলকাতার এই খাবারের স্বর্গে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন হলো? মন্তব্যে জানান, আর আপনার প্রিয় স্টলের নামও শেয়ার করতে ভুলবেন না!
মন্তব্য করুন