Zika Virus Symptoms & Signs: জিকা ভাইরাস – একটি নাম যা শুনলেই মনে জাগে আতঙ্ক। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের পুণেতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় সারা দেশ জুড়ে চলছে উদ্বেগ। কিন্তু এই ভাইরাস আসলে কী? কীভাবে ছড়ায়? এর উপসর্গ কী? আসুন জেনে নেওয়া যাক এই মারাত্মক ভাইরাস সম্পর্কে সব কিছু।
জিকা ভাইরাস কী?
জিকা ভাইরাস হল ফ্লাভিভাইরিডে পরিবারের একটি সদস্য। এটি প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা বনে একটি রিসাস বানরের মধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে উগান্ডা এবং তানজানিয়ার মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। তারপর থেকে এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
কীভাবে ছড়ায়?
জিকা ভাইরাস মূলত এডিস প্রজাতির মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস – এই দুই প্রজাতির মশা জিকা ভাইরাস বহন করে। এই মশাগুলি দিনের বেলায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। তাই দিনের বেলায় মশার কামড় থেকে সাবধান থাকা বিশেষ জরুরি।
জিকা ভাইরাস শুধুমাত্র মশার কামড়ের মাধ্যমেই নয়, অন্যান্য উপায়েও ছড়াতে পারে। যেমন:
– গর্ভাবস্থায় মা থেকে ভ্রূণে
– যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে
– রক্ত দানের মাধ্যমে
উপসর্গ
জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে:
– হালকা জ্বর
– জয়েন্টে ব্যথা
– চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি
– চোখে লালচে ভাব (কনজাংটিভাইটিস)
– মাথা ব্যথা
– পেশীতে ব্যথা
তবে অনেক ক্ষেত্রেই সংক্রমিত ব্যক্তির কোনো উপসর্গ দেখা নাও যেতে পারে। এটি বিশেষ উদ্বেগের কারণ, কারণ অনেকেই জানতেই পারেন না যে তারা সংক্রমিত হয়েছেন।
ভারতে জিকা ভাইরাসের ইতিহাস
ভারতে প্রথম জিকা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে গুজরাটে। এরপর ২০১৭ সালের মে মাসে গুজরাটে আরও তিনটি কেস পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের শেষের দিকে রাজস্থানে অন্তত ১৫৯টি এবং মধ্যপ্রদেশে ১২৭টি কেস রিপোর্ট করা হয়।
২০২১ সালের জুলাই মাসে কেরালায় প্রথম জিকা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। প্রথম নিশ্চিত কেসের পর, আরও ১৯ জনকে পরীক্ষা করা হয় যাদের আগে থেকেই উপসর্গ ছিল। এদের মধ্যে ১৩ জনের ফলাফল পজিটিভ আসে, যা দেখায় যে মে ২০২১ থেকেই কেরালায় জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। ৬ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত কেরালায় মোট ৬৫টি কেস রিপোর্ট করা হয়।
২০২১ সালের ২২ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের কানপুরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন অফিসারের শরীরে জিকা ভাইরাস পাওয়া যায়, যা ছিল উত্তরপ্রদেশের প্রথম রিপোর্ট করা কেস।
Dengue: ৫টি অবাক করা ঘরোয়া কৌশলে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়াকে দিন চ্যালেঞ্জ!
বর্তমান পরিস্থিতি
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের পুণেতে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই খবরের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের স্বাস্থ্য পরিষেবা মহানির্দেশক (ডিজিএইচএস) ডাঃ অতুল গোয়েল সব রাজ্যকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে:
– প্রসূতিদের জিকা ভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষায় জোর দিতে হবে
– সংক্রমিত প্রসূতিদের ভ্রূণ পরীক্ষা করতে হবে
– হাসপাতালগুলিতে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নিয়োগ করতে হবে যারা এডিস মশার বাড়বাড়ন্ত রোধে কাজ করবেন
– বসতি এলাকা, কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নির্মাণ ক্ষেত্রসহ সব জায়গায় মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে নজরদারি বাড়াতে হবে
– সামাজিক মাধ্যমে বার্তা দিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে
জিকা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা
জিকা ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
– মশারি ব্যবহার করুন
– পুরো শরীর ঢাকা কাপড় পরুন
– মশা তাড়ানোর স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করুন
– জানালা ও দরজায় মশারি লাগান
– বাড়ির আশপাশে জমা জল পরিষ্কার রাখুন
– গর্ভাবস্থায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন
জিকা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর কতদিন উপসর্গ থাকে
সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধক কী
জিকা ভাইরাস প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং যৌন সংক্রমণ প্রতিরোধ করা। নিচে এই দুটি উপায়ের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল:
মশার কামড় থেকে প্রতিরোধ
জিকা ভাইরাস প্রধানত এডিস প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
- ইনসেক্ট রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন: পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (EPA)-নিবন্ধিত ইনসেক্ট রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন যা DEET, IR3535, বা ইকারিডিন ধারণ করে। এটি ত্বক বা পোশাকের উপর প্রয়োগ করা যেতে পারে.
- সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা পোশাক পরুন: লম্বা হাতা এবং লম্বা প্যান্ট পরুন যাতে ত্বক ঢেকে থাকে। হালকা রঙের ঢিলা পোশাক পরা ভালো.
- মশার জাল ব্যবহার করুন: বিশেষ করে দিনের বেলা বা সন্ধ্যায় ঘুমানোর সময় মশার জাল ব্যবহার করুন। ছোট বাচ্চা এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ.
- জানালা এবং দরজায় মশারি লাগান: মশা যাতে ঘরে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য জানালা এবং দরজায় মশারি লাগান। এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবহার করাও একটি ভালো উপায়.
- মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করুন: বাড়ির আশেপাশে জমা জল পরিষ্কার রাখুন, ফুলের টব, বালতি, পুরানো টায়ার ইত্যাদি থেকে জমা জল ফেলে দিন.
চিনি ব্যবহারের অন্ধকার দিক: জেনে নিন কি কি ক্ষতি করছেন নিজের
যৌন সংক্রমণ প্রতিরোধ
জিকা ভাইরাস যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। যৌন সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
- কনডম ব্যবহার করুন: যৌন সম্পর্কের সময় সঠিকভাবে এবং নিয়মিত কনডম ব্যবহার করুন। এটি পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে যৌন সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়.
- যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকুন: যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকলে যৌন সংক্রমণের ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যায়.
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ সতর্কতা: গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গী যদি জিকা সংক্রমিত এলাকায় ভ্রমণ করে থাকে, তবে পুরো গর্ভাবস্থায় যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা বা কনডম ব্যবহার করা উচিত
জিকা ভাইরাস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা ও তাদের সন্তানদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ভারতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমরা এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে পারি। মনে রাখবেন, সচেতনতাই হল জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের প্রধান অস্ত্র।