প্রতিদিন চুলে কতবার চিরুনি করা উচিত? এই প্রশ্নটি আমরা প্রায় সবাই নিজেদের মনে করি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ২ বার চিরুনি করা স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য আদর্শ । সকালে একবার এবং রাতে একবার চিরুনি করলে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল পুরো চুলে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই নিয়ম সবার জন্য এক নয়। আপনার চুলের ধরন, দৈর্ঘ্য এবং অবস্থার উপর নির্ভর করে চিরুনি করার সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে।
চুল আমাদের সৌন্দর্যের একটি বড় অংশ। সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর চুল পেতে হলে সঠিক পরিচর্যা জরুরি। চিরুনি করা চুলের যত্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু অতিরিক্ত চিরুনি করলে চুলের ক্ষতি হয়। আবার কম চিরুনি করলেও চুল এলোমেলো এবং জট পাকিয়ে যায়। তাই সঠিক ভারসাম্য রাখা খুবই জরুরি।
এই নিবন্ধে আমরা জানব চুলে কতবার চিরুনি করা উচিত, কীভাবে চিরুনি করবেন, কোন সময় চিরুনি করা ভালো এবং অতিরিক্ত চিরুনি করলে কী ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরব।
চুলে চিরুনি করার সঠিক সংখ্যা (আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী)
চুলের ধরন অনুযায়ী চিরুনি করার সংখ্যা ভিন্ন হয়। প্রতিটি চুলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। কারো চুল শুষ্ক, কারো তৈলাক্ত, আবার কারো চুল কোঁকড়ানো। তাই চুলের ধরন বুঝে চিরুনি করতে হবে।
সাধারণ বা নরমাল চুলের জন্য
যাদের চুল সাধারণ বা নরমাল, তাদের জন্য দিনে ২ বার চিরুনি করা আদর্শ । সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আরেকবার চিরুনি করুন। এতে মাথার ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেল চুলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছায়। চুল থাকে মসৃণ এবং চকচকে।
নরমাল চুলে দিনে ২ বারের বেশি চিরুনি করার দরকার নেই। বেশি চিরুনি করলে চুল দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
| সময় | চিরুনি করার পদ্ধতি | উপকারিতা |
|---|---|---|
| সকাল | হালকা হাতে মূল থেকে আগা পর্যন্ত | জট খোলে, তেল ছড়ায় |
| রাত | ধীরে ধীরে ১০-১৫টি স্ট্রোক | রক্ত সঞ্চালন বাড়ে |
শুষ্ক চুলে অতিরিক্ত চিরুনি করা উচিত নয়। দিনে ১-২ বার চিরুনি করাই যথেষ্ট। শুষ্ক চুল ভাঙার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই খুব সাবধানে চিরুনি করতে হবে। চিরুনি করার আগে চুলে হালকা তেল বা সিরাম লাগিয়ে নিতে পারেন।
শুষ্ক চুলে চওড়া দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। এতে চুল কম ভাঙে। খুব জোরে টেনে চিরুনি করবেন না। চুলের গোড়া থেকে শুরু না করে আগা থেকে শুরু করুন। ধীরে ধীরে উপরের দিকে যান।
| চুলের অবস্থা | দিনে চিরুনি | বিশেষ যত্ন |
|---|---|---|
| খুব শুষ্ক | ১ বার | তেল লাগিয়ে চিরুনি করুন |
| মাঝারি শুষ্ক | ১-২ বার | চওড়া দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন |
তৈলাক্ত চুলের জন্য
তৈলাক্ত চুলে দিনে ২-৩ বার চিরুনি করতে পারেন। তবে বেশি চিরুনি করলে মাথার ত্বক থেকে আরও বেশি তেল নিঃসরণ হতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে। তৈলাক্ত চুলে সকাল এবং রাতে নিয়মিত চিরুনি করলে তেল সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
তৈলাক্ত চুলের জন্য প্রাকৃতিক ব্রিসলের চিরুনি ভালো। এতে তেল ভালোভাবে বিতরণ হয়। দিনে একবার মাথার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করে চিরুনি করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং চুল স্বাস্থ্যকর থাকে।
কোঁকড়ানো বা ঘন চুলের জন্য
কোঁকড়ানো চুলে প্রতিদিন চিরুনি করার দরকার নেই । সপ্তাহে ২-৩ বার চিরুনি করাই যথেষ্ট। কোঁকড়ানো চুলে বেশি চিরুনি করলে চুলের প্রাকৃতিক আকৃতি নষ্ট হয়। চুল ফাটে এবং রুক্ষ দেখায়।
কোঁকড়ানো চুলে অবশ্যই চওড়া দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। চুল ভেজা অবস্থায় কন্ডিশনার লাগিয়ে হালকা করে চিরুনি করুন। শুকনো অবস্থায় চিরুনি করলে চুল বেশি ভাঙে। হাত দিয়ে চুল আলগা করে নিন। তারপর চিরুনি ব্যবহার করুন।
| চুলের ধরন | সাপ্তাহিক চিরুনি | সঠিক চিরুনি |
|---|---|---|
| হালকা কোঁকড়া | ৪-৫ বার | চওড়া দাঁতের প্লাস্টিক |
| খুব কোঁকড়া | ২-৩ বার | চওড়া দাঁতের কাঠের |
| খুব ঘন সোজা | ৭-১০ বার | মাঝারি দাঁতের চিরুনি |
অতিরিক্ত চিরুনি করার ক্ষতিকর প্রভাব
অনেকে মনে করেন বেশি বেশি চিরুনি করলে চুল ভালো থাকে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চিরুনি করলে চুলের ক্ষতি হয় । চুল পড়া বেড়ে যায়। তাই সঠিক পরিমাণে চিরুনি করা জরুরি।
চুল পড়া বৃদ্ধি
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে বারবার চিরুনি করেন তাদের চুল বেশি পড়ে । ৪ সপ্তাহের গবেষণায় দেখা যায়, কম চিরুনি করলে চুল পড়া কমে যায়। বেশি চিরুনি করলে চুল দুর্বল হয়ে যায় এবং ভেঙে পড়ে।
প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবে ৫০-১০০টি চুল পড়ে । এটি একদম স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত চিরুনি করলে এই সংখ্যা বেড়ে যায়। চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়। ফলে চুল সহজেই উঠে যায়।
| চিরুনি করার সংখ্যা | চুল পড়ার পরিমাণ | অবস্থা |
|---|---|---|
| দিনে ১-২ বার | ৫০-১০০ স্ট্র্যান্ড | স্বাভাবিক |
| দিনে ৫-৬ বার | ১৫০-২০০ স্ট্র্যান্ড | অতিরিক্ত ক্ষতি |
| দিনে ১০+ বার | ২০০+ স্ট্র্যান্ড | গুরুতর ক্ষতি |
বেশি চিরুনি করলে চুলের বাইরের স্তর বা কিউটিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয় । একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৮০ বার চিরুনি করলে চুলের কিউটিকলে মারাত্মক ক্ষতি হয়। চুলের উপরিভাগ রুক্ষ হয়ে যায়। চুলের আগা ফেটে যায় যাকে স্প্লিট এন্ডস বলে।
চুল যখন বারবার ঘষা খায়, তখন এর প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর নষ্ট হয়। চুল হয়ে যায় শুষ্ক এবং ভঙ্গুর। চুল সহজেই ভেঙে যায়। চুলের শক্তি কমে যায় । গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ঘন ঘন চিরুনি করেন তাদের চুল অনেক বেশি পাতলা এবং দুর্বল।
মাথার ত্বকের সমস্যা
অতিরিক্ত চিরুনি করলে মাথার ত্বকেও সমস্যা হতে পারে। চিরুনির দাঁত যদি ধারালো হয়, তাহলে মাথার ত্বকে ঘষা লাগতে পারে। এতে জ্বালা এবং ইনফেকশন হতে পারে। মাথার ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে।
বেশি চিরুনি করলে মাথার ত্বক থেকে বেশি তেল নিঃসরণ হয়। এতে চুল তাড়াতাড়ি তৈলাক্ত হয়ে যায়। মাথায় খুশকির সমস্যাও বাড়তে পারে। তাই মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্যও সীমিত চিরুনি করা ভালো।
সঠিকভাবে চিরুনি করার নিয়ম
শুধু চিরুনির সংখ্যা নয়, চিরুনি করার পদ্ধতিও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে চিরুনি না করলে চুলের ক্ষতি হয়। নিচে সঠিক চিরুনি করার নিয়ম দেওয়া হলো।
সঠিক চিরুনি নির্বাচন
চিরুনি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে অনেক ধরনের চিরুনি পাওয়া যায়। কাঠের, প্লাস্টিকের, ধাতুর এবং প্রাকৃতিক ব্রিসলের চিরুনি আছে। প্রতিটির নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা আছে।
কাঠের চিরুনি সবচেয়ে ভালো। এতে স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি হয় না। চুল ফুলে যায় না। কাঠের চিরুনি মাথার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করে। প্রাকৃতিক ব্রিসলের চিরুনি তৈলাক্ত চুলের জন্য ভালো। এতে তেল ভালোভাবে ছড়ায়।
প্লাস্টিকের চিরুনি সস্তা কিন্তু স্ট্যাটিক তৈরি করে। ধাতুর চিরুনি চুলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এর দাঁত ধারালো হয় এবং মাথার ত্বকে আঘাত করতে পারে।
| চিরুনির ধরন | সুবিধা | উপযুক্ত চুলের ধরন | দাম |
|---|---|---|---|
| কাঠের চিরুনি | স্ট্যাটিক নেই, প্রাকৃতিক | সব ধরনের | মাঝারি |
| ব্রিসল ব্রাশ | তেল ছড়ায়, মসৃণ করে | সোজা, তৈলাক্ত | বেশি |
| চওড়া দাঁতের চিরুনি | জট খোলে, কম ক্ষতি | কোঁকড়া, ঘন | কম |
| প্লাস্টিক চিরুনি | সহজলভ্য | হালকা ব্যবহার | কম |
চিরুনি করার সঠিক কৌশল জানা খুবই জরুরি। অনেকে চুলের গোড়া থেকে চিরুনি শুরু করেন। এটি ভুল। চিরুনি সবসময় চুলের আগা থেকে শুরু করতে হবে। প্রথমে চুলের শেষ অংশের জট খুলুন। তারপর ধীরে ধীরে উপরের দিকে যান।
খুব জোরে বা তাড়াহুড়ো করে চিরুনি করবেন না। ধীরে ধীরে এবং হালকা হাতে চিরুনি করুন । জোরে চিরুনি করলে চুল ভেঙে যায়। চুলের ক্ষতি হয়। চিরুনি করার সময় মাথার ত্বকে হালকা চাপ দিতে পারেন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
চিরুনি করার সময় সোজা হয়ে বসুন বা দাঁড়ান। মাথা নিচু করে চিরুনি করবেন না। এতে চুলের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
| ধাপ | পদ্ধতি | সময় |
|---|---|---|
| ১. আগা থেকে শুরু | জট খোলার জন্য | ১-২ মিনিট |
| ২. মাঝখান পর্যন্ত | হালকা স্ট্রোক | ১ মিনিট |
| ৩. গোড়া পর্যন্ত | পুরো চুলে চিরুনি | ১-২ মিনিট |
| ৪. মাথার ত্বক ম্যাসাজ | হালকা চাপে | ৩০ সেকেন্ড |
ভেজা চুলে চিরুনি করা
ভেজা চুলে চিরুনি করা ঠিক নয়। ভেজা চুল খুবই দুর্বল থাকে। সহজেই ভেঙে যায়। শ্যাম্পু করার পর চুল মুছে হালকা শুকিয়ে নিন। তারপর চওড়া দাঁতের চিরুনি দিয়ে হালকা করে জট খুলুন।
যদি ভেজা চুলে চিরুনি করতেই হয়, তাহলে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। কন্ডিশনার চুলকে পিচ্ছিল করে। চিরুনি সহজে চলে। চুল কম ভাঙে। ভেজা চুলে কখনও সরু দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন না।
চুল ৮০% শুকিয়ে গেলে তারপর নরমাল চিরুনি ব্যবহার করুন। ভেজা চুল টেনে চিরুনি করা একদম উচিত নয়। এতে চুলের ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং গবেষণা ফলাফল
আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি অনুযায়ী, সুস্থ চুলের যত্নে চিরুনি করা গুরুত্বপূর্ণ । তবে সঠিক পদ্ধতিতে চিরুনি করতে হবে। হেলথলাইনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিনে দুইবার চিরুনি করা উচিত – সকালে এবং রাতে । এতে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল সারা চুলে ছড়িয়ে পড়ে।
ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলেন, জোরে চিরুনি করলে চুল ভাঙে এবং ক্ষতি হয় । এমনকি দিনে একবার জোরে চিরুনি করলেও চুলের ক্ষতি হতে পারে। তাই সবসময় হালকা হাতে চিরুনি করতে হবে।
একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, বারবার চিরুনি করলে চুলের কিউটিকল এবং অভ্যন্তরীণ ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় । গবেষণায় ১৫ জন নিয়মিত চিরুনি ব্যবহারকারী এবং ১৫ জন মাঝেমধ্যে ব্যবহারকারীর চুল পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, যারা বেশি চিরুনি করেন তাদের চুল পাতলা এবং দুর্বল। চুলের শক্তি কমে যায়।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, ৪৮০ বার চিরুনি করার পর চুলের কিউটিকল মারাত্মক ক্ষতি হয় । এই ক্ষতি ঘন ঘন চুল বাঁধার ক্ষতির চেয়েও বেশি। তাই চিরুনি করার সংখ্যা সীমিত রাখা উচিত।
| গবেষণার ফলাফল | উৎস | সারসংক্ষেপ |
|---|---|---|
| দিনে ২ বার চিরুনি আদর্শ | Healthline, 2020 | মাথার তেল ছড়ায়, চুল স্বাস্থ্যকর থাকে |
| বেশি চিরুনি করলে চুল পড়ে | Healthline, 2020 | ৪ সপ্তাহের গবেষণায় প্রমাণিত |
| ৪৮০ স্ট্রোক কিউটিকল ক্ষতি করে | PubMed, 2021 | চুলের বাইরের স্তর নষ্ট হয় |
| জোরে চিরুনি করা ক্ষতিকর | Dermatologists | চুল ভেঙে যায় |
চিরুনি করার সময় নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সময়ে চিরুনি করার বিভিন্ন উপকারিতা আছে। সঠিক সময়ে চিরুনি করলে চুল আরও ভালো থাকে।
সকালের চিরুনি
সকালে চিরুনি করা খুবই জরুরি। রাতে ঘুমানোর সময় চুল এলোমেলো হয়ে যায়। সকালে চিরুনি করলে চুল গোছানো হয়। চুলের জট খুলে যায়। সকালে চিরুনি করলে সারাদিন চুল সুন্দর থাকে।
সকালে চিরুনি করার সময় মাথার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। মাথা ঝিমঝিম ভাব কমে যায়। মন সতেজ হয়। সকালে চিরুনি করলে চুলে প্রাকৃতিক তেল ছড়িয়ে পড়ে।
রাতের চিরুনি (ঘুমানোর আগে)
রাতে ঘুমানোর আগে চিরুনি করা খুবই উপকারী। সারাদিনের ধুলো-ময়লা এবং দূষণ চুলে লেগে থাকে। রাতে চিরুনি করলে এসব পরিষ্কার হয়। চুল পরিষ্কার থাকে। মাথার ত্বক শ্বাস নিতে পারে।
রাতে চিরুনি করলে ভালো ঘুম হয়। চিরুনি করার সময় মাথায় হালকা ম্যাসাজ হয়। এতে মন শান্ত হয়। চাপ কমে যায়। রাতে চিরুনি করলে চুল রেশমের মতো মসৃণ হয়। সকালে চুল কম এলোমেলো থাকে।
স্নানের আগে বনাম পরে
স্নানের আগে চিরুনি করা ভালো। এতে চুলের জট খুলে যায়। শ্যাম্পু করার সময় চুল কম ভাঙে। স্নানের আগে চিরুনি করলে মাথার ত্বকের মৃত কোষ উঠে যায়। চুল পরিষ্কার হয় ভালোভাবে।
স্নানের পরপরই চিরুনি করা উচিত নয়। চুল ভেজা থাকে। ভেজা চুল খুবই নাজুক। স্নানের পর চুল ৭০-৮০% শুকিয়ে গেলে তারপর চিরুনি করুন। চওড়া দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। হালকা হাতে চিরুনি করুন।
| সময় | উপকারিতা | সাবধানতা |
|---|---|---|
| সকাল | জট খোলে, সারাদিন চুল গোছানো | জোরে চিরুনি করবেন না |
| রাত | ধুলো-ময়লা পরিষ্কার, ভালো ঘুম | ১০-১৫ স্ট্রোকের বেশি নয় |
| স্নানের আগে | জট খোলা সহজ, শ্যাম্পু ভালো হয় | পুরো চুলে চিরুনি করুন |
| স্নানের পরে | শুকনো চুলে কম ক্ষতি | ভেজা চুলে চিরুনি করবেন না |
চিরুনির যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। নোংরা চিরুনিতে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক জন্মায়। এতে মাথার ত্বকে ইনফেকশন হতে পারে। চুল পড়তে পারে। তাই নিয়মিত চিরুনি পরিষ্কার করতে হবে।
সপ্তাহে অন্তত একবার চিরুনি পরিষ্কার করুন। চিরুনি থেকে চুল তুলে ফেলুন। হালকা গরম পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে চিরুনি ভিজিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।
কাঠের চিরুনি বেশিক্ষণ পানিতে ভেজানো যাবে না। কাঠ ফুলে যেতে পারে। কাঠের চিরুনি শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করুন। মাসে একবার হালকা তেল দিয়ে কাঠের চিরুনি মুছে নিতে পারেন।
চিরুনি ৬ মাস থেকে ১ বছর ব্যবহার করার পর বদলে ফেলুন। পুরানো চিরুনির দাঁত ভোঁতা হয়ে যায়। চুল ভালোভাবে চিরুনি হয় না। চিরুনির দাঁত ভেঙে গেলে সাথে সাথে বদলে ফেলুন। ভাঙা দাঁত মাথার ত্বকে আঘাত করতে পারে।
| চিরুনির ধরন | পরিষ্কার ফ্রিকোয়েন্সি | পদ্ধতি | বদলানোর সময় |
|---|---|---|---|
| প্লাস্টিক চিরুনি | সপ্তাহে ১ বার | পানি ও শ্যাম্পু | ৬ মাস |
| কাঠের চিরুনি | সপ্তাহে ১ বার | শুকনো কাপড় | ১ বছর |
| ব্রিসল ব্রাশ | সপ্তাহে ২ বার | হালকা গরম পানি | ৮-১০ মাস |
চুল পড়া রোধে কতবার চিরুনি করব?
চুল পড়া রোধে দিনে সর্বোচ্চ ২ বার চিরুনি করুন । বেশি চিরুনি করলে চুল আরও পড়বে। হালকা হাতে চিরুনি করুন। জোরে টানাটানি করবেন না। চিরুনির দাঁত ভোঁতা হলে বদলে ফেলুন।
শিশুদের চুলে কতবার চিরুনি করা উচিত?
শিশুদের চুল খুবই নরম এবং সূক্ষ্ম। দিনে ১-২ বার চিরুনি করাই যথেষ্ট। খুব নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন। জোরে চিরুনি করবেন না। শিশুর মাথার ত্বক খুবই সংবেদনশীল। সাবধানে চিরুনি করুন।
লম্বা চুলের জন্য কি বেশি চিরুনি করতে হয়?
লম্বা চুলে বেশি জট পাকে। তাই দিনে ২-৩ বার চিরুনি করতে পারেন । তবে খুব সাবধানে চিরুনি করুন। লম্বা চুলের আগা থেকে শুরু করুন। ধীরে ধীরে গোড়ার দিকে যান। রাতে ঘুমানোর আগে চুল বেঁধে নিন যাতে কম জট পাকে।
চুল বৃদ্ধিতে চিরুনি করার ভূমিকা কী?
চিরুনি করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে চুলের ফলিকলে বেশি পুষ্টি পৌঁছায়। চুল দ্রুত বাড়ে। তবে বেশি চিরুনি করলে উল্টো ক্ষতি হয়। নিয়মিত দিনে ২ বার হালকা হাতে চিরুনি করুন। মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন।
রাতে ঘুমানোর আগে চিরুনি করা কি ভালো?
হ্যাঁ, রাতে ঘুমানোর আগে চিরুনি করা খুবই ভালো। এতে সারাদিনের ধুলো-ময়লা পরিষ্কার হয়। মাথায় হালকা ম্যাসাজ হয়। ভালো ঘুম হয়। চুল পরিষ্কার থাকে। তবে খুব বেশি চিরুনি করবেন না। ১০-১৫ বার হালকা স্ট্রোকই যথেষ্ট।
চুলের স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক সংখ্যায় চিরুনি করা খুবই জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে দিনে ২ বার চিরুনি করা আদর্শ । তবে আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী এই সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে। শুষ্ক চুলে কম চিরুনি করুন। কোঁকড়ানো চুলে সপ্তাহে কয়েকবার চিরুনি করাই যথেষ্ট।
মনে রাখবেন, বেশি চিরুনি করলে চুলের ক্ষতি হয় । চুল পড়ে এবং ভেঙে যায়। সবসময় হালকা হাতে চিরুনি করুন। সঠিক চিরুনি নির্বাচন করুন। কাঠের চিরুনি সবচেয়ে ভালো। চিরুনি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
চুলের সঠিক যত্ন নিলে চুল থাকবে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর। চিরুনি করার পাশাপাশি সুষম খাবার খান। প্রচুর পানি পান করুন। নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন। তাহলে চুল থাকবে সুন্দর এবং মজবুত।
আপনার চুলের অভিজ্ঞতা কেমন? দিনে কতবার চিরুনি করেন? আপনার মতামত কমেন্টে শেয়ার করুন। এই তথ্য অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন যাতে তারাও চুলের সঠিক যত্ন নিতে পারেন।











