ভারতের ইন্টারনেট জগতে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে চলেছে। ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের স্টারলিঙ্কের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ভারতী এয়ারটেল। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতের কোটি কোটি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যাবে স্টারলিঙ্কের হাই-স্পিড স্যাটেলাইট ইন্টারনেট। ২০২৫ সালের ১১ মার্চ এই ঘোষণা করা হয়েছে, যা ভারতের টেলিকম খাতে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সহযোগিতার লক্ষ্য হলো দেশের দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এবং গ্রাহকদের জন্য দ্রুত ও সাশ্রয়ী পরিষেবা নিশ্চিত করা।
এয়ারটেল এবং স্পেসএক্সের মধ্যে এই চুক্তি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফল। ভারতী এয়ারটেলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর গোপাল ভিট্টল জানিয়েছেন, “স্পেসএক্সের সঙ্গে এই চুক্তি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে আমরা ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাই-স্পিড ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে পারব।” অন্যদিকে, স্পেসএক্সের প্রেসিডেন্ট গেয়ান্নে শটওয়েল বলেছেন, “এয়ারটেলের সঙ্গে কাজ করা আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। আমরা ভারতের ইন্টারনেট পরিষেবায় একটি রূপান্তর ঘটাতে চাই।” এই চুক্তির আওতায় এয়ারটেল তাদের বিদ্যমান পরিকাঠামো ব্যবহার করে স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেবে। এটি ভারতে স্টারলিঙ্কের প্রথম বড় পদক্ষেপ, যিনি এর আগে নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল।
স্টারলিঙ্ক ২০২৩ সাল থেকেই ভারতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার চেষ্টা করে আসছে। তবে, ভারত সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে এতদিন তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। এয়ারটেলের সঙ্গে এই নতুন চুক্তির মাধ্যমে সেই বাধা কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইটগুলো লো-আর্থ অরবিটে (LEO) অবস্থান করে, যা ঐতিহ্যবাহী স্যাটেলাইটের তুলনায় অনেক দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। এর ফলে পাহাড়ি এলাকা, গ্রামাঞ্চল বা দুর্গম স্থানে যেখানে মোবাইল টাওয়ার বা ফাইবার নেটওয়ার্ক পৌঁছায় না, সেখানেও সহজে ইন্টারনেট পাওয়া যাবে।
ভারতী এয়ারটেল ভারতের অন্যতম বড় টেলিকম সংস্থা, যার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি। অন্যদিকে, স্টারলিঙ্ক বিশ্বব্যাপী ১০০টিরও বেশি দেশে তাদের পরিষেবা দিচ্ছে। এই চুক্তির মাধ্যমে এয়ারটেলের গ্রাহকরা শুধু ইন্টারনেটই নয়, স্পেসএক্সের অন্যান্য পণ্যও তাদের বিপণির মাধ্যমে পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, স্টারলিঙ্কের টার্মিনাল ডিভাইসগুলো এয়ারটেলের দোকান থেকে কেনা যাবে। এছাড়া, দুর্গম এলাকার স্কুল, হাসপাতাল এবং ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। গোপাল ভিট্টলের মতে, এই পরিষেবা গ্রাহকদের জন্য খরচ কমাতে সাহায্য করবে এবং ডিজিটাল ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে।
এই চুক্তি ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় সুযোগ। ধরা যাক, আপনি পাহাড়ে বা গ্রামে থাকেন, যেখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া মুশকিল। স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি সেখানেও দ্রুত নেট চালাতে পারবেন। এয়ারটেলের বিশাল নেটওয়ার্ক এবং স্টারলিঙ্কের উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই পরিষেবা শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। তবে, এই পরিষেবা কবে থেকে পুরোপুরি চালু হবে এবং এর খরচ কত হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই এটি বাজারে আসতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে যেমন X-এও এই চুক্তি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ভারতের টেলিকম বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে এই চুক্তির ফলে, এবং গ্রাহকরা আরও ভালো পরিষেবা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এটি শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্যও একটি বড় পদক্ষেপ।
শেষ কথা হিসেবে বলা যায়, স্টারলিঙ্ক ও এয়ারটেলের এই জোট ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরের ব্যস্ত জীবন—সবখানেই দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেটের স্বপ্ন এখন আর দূরের নয়।
মন্তব্য করুন