Hezbollah fires 175 rockets into Israel: লেবানন ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ একদিনে ১৭৫টি রকেট নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে। এই হামলায় ইসরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফা সহ বেশ কয়েকটি শহরে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহ।রবিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় হাইফা শহরে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া কিরিয়াত বিয়ালিক এলাকায় একটি আবাসিক ভবনের কাছে রকেট আঘাত করে যা থেকে আরও ৪ জন আহত হয়।
হিজবুল্লাহর এই হামলা ইসরায়েলের বৈমানিক হামলার প্রতিশোধ হিসেবে করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। গত শুক্রবার ইসরায়েলের একটি এয়ারস্ট্রাইকে বৈরুতে হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কমান্ডার সহ অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছিল ।হিজবুল্লাহর উপনেতা নাইম কাসেম বলেছেন, “এটা একটি অসীম যুদ্ধের শুরু। আমরা স্বীকার করি যে আমরা ব্যথিত। আমরা মানুষ। কিন্তু যেমন আমরা ব্যথিত, তেমনি আপনারাও ব্যথিত হবেন।”ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরায়েল হিজবুল্লাহর উপর “একের পর এক আঘাত” হেনেছে। তিনি বলেন, “যদি হিজবুল্লাহ বার্তাটি না বুঝে থাকে, তাহলে আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে তারা এটা বুঝবে।”ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর ২৯০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রকেট লঞ্চার এবং অপারেশনাল সুবিধা রয়েছে।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা হাইফার দক্ষিণে অবস্থিত রামাত দাভিদ বিমান ঘাঁটিতে Fadi 1 এবং Fadi 2 রকেট দিয়ে হামলা চালিয়েছে
এই হামলায় ব্যবহৃত রকেটগুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত প্রযুক্তির বলে মনে করা হচ্ছে।উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সাইরেন বেজে উঠেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রবিবার সকাল পর্যন্ত লেবানন থেকে ১৩৫টিরও বেশি প্রক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।এদিকে, লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় দক্ষিণ লেবাননে ৩ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে। তবে এদের মধ্যে কতজন সাধারণ নাগরিক এবং কতজন যোদ্ধা তা স্পষ্ট করা হয়নি।
জাতিসংঘের লেবানন বিষয়ক বিশেষ দূত জেনিন হেনিস-প্লাসচার্ট সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সাম্প্রতিক উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে একটি “আসন্ন বিপর্যয়” ঘটাতে পারে। তিনি বলেছেন, “কোনো সামরিক সমাধান নেই যা উভয় পক্ষের নিরাপত্তা বাড়াবে।” ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষের এই নতুন পর্যায় শুরু হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর থেকে। হিজবুল্লাহ হামাসের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ইসরায়েলের উপর রকেট হামলা শুরু করে।এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লেবাননে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি জার্মানি সহ অন্যান্য দেশও পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ আরও বাড়লে তা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরাও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান চলবে যতক্ষণ না উত্তর ইসরায়েলের বাসিন্দারা নিরাপদে ফিরে আসতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের অঞ্চলে নিরাপত্তার বাস্তবতা পরিবর্তন করছি, আমাদের সন্তানদের জন্য, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য, যাতে ৭ অক্টোবরের ঘটনা আর না ঘটে।”
লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে মৃত্যু বাড়ছে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর প্রতিশোধের হুমকি
এদিকে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে তৃতীয় ডিভিশন মোতায়েন করেছে। হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, তাদের যোদ্ধারা সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। বৈরুতের ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, হিজবুল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে আবাসিক এলাকায় তাদের কমান্ড সেন্টার এবং অস্ত্রাগার স্থাপন করেছে। তবে হিজবুল্লাহ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় দক্ষিণ লেবাননের বিন্ত জবেইল শহরে একটি পৌর ভবনে ১০ জন দমকলকর্মী নিহত হয়েছে। এছাড়া রবিবার দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে বিমান হামলায় আরও ২২ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের এই হামলায় লেবাননে ১২ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিমান হামলা আরও বাড়লে দেশটি ১৯৭৫-১৯৯০ সালের গৃহযুদ্ধের মতো ব্যাপক ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত নাজুক। আন্তর্জাতিক মহল উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ উভয়ই এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। ফলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।