Vice Admiral Arti Sarin biography: ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হলো। সার্জন ভাইস অ্যাডমিরাল আরতি সারিন ১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল সার্ভিসেস (AFMS) এর ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।
তিনিই প্রথম নারী অফিসার যিনি এই উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এর আগে ৪৫ জন পুরুষ অফিসার এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।ভাইস অ্যাডমিরাল সারিন এর এই নিয়োগ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের জন্য একটি মাইলফলক। তিনি বর্তমানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে সর্বোচ্চ পদমর্যাদার নারী অফিসার। প্রায় ৪০ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।ভাইস অ্যাডমিরাল সারিন ১৯৮৫ সালে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ (AFMC) থেকে স্নাতক হয়ে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি রেডিওডায়াগনোসিস এবং রেডিয়েশন অনকোলজিতে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
Indian Navy Recruitment 2024: ২৫০টি Short Service Commission পদের জন্য আবেদন শুরু!
এছাড়াও তিনি পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গামা নাইফ সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।তাঁর কর্মজীবনে তিনি নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর মেডিকেল সার্ভিসেস এর ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি INHS Asvini এবং AFMC এর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দক্ষিণ নৌ কমান্ড এবং পশ্চিম নৌ কমান্ডের কমান্ড মেডিকেল অফিসার হিসেবেও কাজ করেছেন।ভাইস অ্যাডমিরাল সারিন এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখাতেই কাজ করেছেন। তিনি সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট থেকে ক্যাপ্টেন, নৌবাহিনীতে সার্জন লেফটেন্যান্ট থেকে সার্জন ভাইস অ্যাডমিরাল এবং বিমান বাহিনীতে এয়ার মার্শাল পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০২৪ সালে অতি বিশিষ্ট সেবা মেডেল (AVSM) এবং ২০২১ সালে বিশিষ্ট সেবা মেডেল (VSM) পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি চিফ অফ আর্মি স্টাফ কমেন্ডেশন (২০১৭), চিফ অফ নেভাল স্টাফ কমেন্ডেশন (২০০১) এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ কমেন্ডেশন (২০১৩) অর্জন করেছেন।সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক গঠিত ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন ভাইস অ্যাডমিরাল সারিন। এই টাস্ক ফোর্স মেডিকেল পেশাজীবীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং প্রোটোকল প্রণয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত।তিনি তরুণ নারীদের সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন।
সরকারের নারী শক্তি উদ্যোগের তিনি একজন উজ্জ্বল প্রতীক।ভাইস অ্যাডমিরাল সারিন এর এই নিয়োগ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অগ্রগতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর দুই মাস আগে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাধনা সাক্সেনা নাইর ডিরেক্টর জেনারেল মেডিকেল সার্ভিসেস (আর্মি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তিনিও প্রথম নারী অফিসার যিনি এই পদে নিযুক্ত হয়েছেন।ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ১,৭৩৩ জন নারী অফিসার (আর্মি মেডিকেল কর্পস এবং আর্মি ডেন্টাল কর্পস বাদে) এবং ১০০ জন নারী অন্যান্য পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন।
২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ভারতীয় বিমান বাহিনীতে ১,৬৫৪ জন নারী অফিসার (মেডিকেল এবং ডেন্টাল শাখা বাদে) এবং ১৫৫ জন নারী অগ্নিবীর বায়ু কর্মরত ছিলেন। একই সময়ে ভারতীয় নৌবাহিনীতে ৫৮০ জন নারী অফিসার (মেডিকেল এবং ডেন্টাল অফিসার বাদে) এবং ৭২৬ জন নারী নাবিক (অগ্নিবীর) কর্মরত ছিলেন।সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল সার্ভিসে নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ রয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত আর্মি মেডিকেল কর্পসে ১,২১২ জন, নৌবাহিনীতে ১৫১ জন এবং বিমান বাহিনীতে ২৭৪ জন নারী চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। আর্মি ডেন্টাল কর্পসে ১৬৮ জন, নৌবাহিনীতে ১০ জন এবং বিমান বাহিনীতে ৫ জন নারী দন্ত চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। মিলিটারি নার্সিং সার্ভিসে সেনাবাহিনীতে ৩,৮৪১ জন, নৌবাহিনীতে ৩৮০ জন এবং বিমান বাহিনীতে ৪২৫ জন নারী কর্মরত ছিলেন।
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে নারী ও পুরুষ অফিসারদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না। নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে উভয়ের জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য। সংগঠনের প্রয়োজন অনুযায়ী পদায়ন করা হয়।সেনাবাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে মিলিটারি পুলিশে নারীদের অন্যান্য পদমর্যাদায় নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে ১,৭০০ জন নারীকে নিয়োগ করা হবে (প্রতি বছর প্রায় ১০০ জন)।নৌবাহিনীতে নারী কর্মীদের জন্য স্বামী-স্ত্রীর একই স্থানে পদায়ন, পুনর্বাসন পদায়ন এবং করুণাজনিত কারণে পদায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটির সাথে অন্যান্য ছুটি (বার্ষিক ছুটি, ফারলো, শিশু পরিচর্যা ছুটি) যুক্ত করার সুযোগও রয়েছে।
মোহনা সিং: তেজসের প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলট যিনি ইতিহাস গড়লেন!
বিমান বাহিনীতে অফিসার নিয়োগ লিঙ্গ নিরপেক্ষ। সকল শাখা ও স্ট্রিমে নারী অফিসার নিয়োগ করা হয়। বিমান বাহিনী ক্রমাগত তার পরিবেশ ও অবকাঠামো উন্নত করছে। নারী কর্মীদের (অফিসার ব্যতীত) নিয়োগ ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে যাতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়।ভাইস অ্যাডমিরাল সারিন এর এই ঐতিহাসিক নিয়োগ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অগ্রগতির একটি মাইলফলক।