Bangladesh significance of August 15 holiday: ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্মরণে পালিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে হামলা চালিয়ে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে এই দিনটি সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়নি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবারের মতো ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে সংসদে এই বিষয়ে একটি আইন পাস করা হয়।
তবে ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি বাতিল করে দেয়। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার এই ছুটি পুনর্বহাল করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতি বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।জাতীয় শোক দিবসে সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে বলেছেন, “১৫ আগস্ট হলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়। এই দিনে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা এই দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করি যাতে আগামী প্রজন্ম জাতির পিতার আদর্শ ও ত্যাগের কথা জানতে পারে।”
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, “১৫ আগস্ট শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালি জাতির জন্য একটি বেদনাদায়ক স্মৃতি। এই দিনে আমরা জাতির পিতাকে হারিয়েছি, হারিয়েছি স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে। তাই এই দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।”বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, “১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয় কারণ এই দিনে শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি, বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল স্পিরিটকেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাই এই দিনটি পালন করা জরুরি যাতে আমরা আমাদের ইতিহাস ভুলে না যাই।”
বন্ধু দিবসে বন্ধুকে জানান হৃদয়ের গভীর অনুভূতি
বন্ধু দিবসে বন্ধুকে জানান হৃদয়ের গভীর অনুভূতি
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল এবং বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের অন্যতম। একই রাতে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর পরিবারের চার সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ও তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী আরজু মনিকেও হত্যা করা হয়।
১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের ফলে দেশের জনগণের মধ্যে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া এই দিনটি পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে।
তবে এই দিনটি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে। বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে যে সরকার এই দিনটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তারা বলছে, সরকার জনগণকে বাধ্য করছে এই দিনটি পালন করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, ১৫ আগস্ট জাতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, তাই এটি পালন করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।
শহিদ দিবস বনাম গণতন্ত্র হত্যা দিবস: ২১ শে জুলাই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিজেপির প্রতিবাদ
শহিদ দিবস বনাম গণতন্ত্র হত্যা দিবস: ২১ শে জুলাই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিজেপির প্রতিবাদ
সমাজবিজ্ঞানী ড. বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক বলেছেন, “১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে এই দিনটি যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না থাকে। আমাদের উচিত এই দিনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা নেওয়া।”
১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের ফলে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এই দিনটি পালনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জাতির পিতার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারছে। তবে এই দিনটিকে যেন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করা হয় সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন। জাতীয় শোক দিবস পালনের মাধ্যমে আমাদের উচিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা।
Share