গরমের দিনে এসি আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকলে আমাদের ত্বকের যে ক্ষতি হতে পারে তা অনেকেই জানেন না। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত এসি ব্যবহারের ফলে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এসি ঘরের বাতাস থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়। এর ফলে ঘরের বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়। এই শুষ্ক বাতাস আমাদের ত্বক থেকেও আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়।
দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে:
শুষ্ক ত্বক: এসির ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস ত্বকের উপরের স্তর থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়। এর ফলে ত্বক শুষ্ক, টানটান ও খসখসে হয়ে যায়।
তৈল উৎপাদন কমে যাওয়া: এসির ঠান্ডা তাপমাত্রায় শরীরের ঘাম উৎপাদন কমে যায়। এর ফলে ত্বকের স্বাভাবিক তৈল উৎপাদনও কমে যায়, যা ত্বককে নিষ্প্রভ ও শুষ্ক করে তোলে।
ত্বকের রোগ বৃদ্ধি: যাদের আগে থেকেই এক্জিমা, সোরিয়াসিস বা রোজাসিয়ার মতো ত্বকের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এসি এই সমস্যাগুলি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
অকালবৃদ্ধ ত্বক: ত্বকের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। এর ফলে সময়ের আগেই ত্বকে ভাঁজ পড়ে ও বলিরেখা দেখা দিতে পারে।
চোখের শুষ্কতা: এসির শুষ্ক বাতাসে চোখের আর্দ্রতাও কমে যায়। এর ফলে চোখে জ্বালা, চুলকানি ও অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
এসির ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
ডা. রাধিকা রাহেজা, একজন ত্বক ও চুলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, “দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকলে শুষ্ক চোখ, অবসাদ, জলশূন্যতা, শুষ্ক বা চুলকানিযুক্ত ত্বক, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি ও হাঁপানি, শব্দ দূষণ, সংক্রামক রোগ এবং ঘরের ভিতরের দূষণের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।”তিনি আরও বলেন, “এসির অতিব্যবহার এড়াতে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে নিয়মিত বিরতি নেওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করা জরুরি।”
ভারতের বিভিন্ন শহরে তাপমাত্রা ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠছে, যার ফলে এসির ব্যবহার অভূতপূর্ব হারে বেড়েছে।একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে প্রতি বছর এসির বাজার প্রায় ১৫% হারে বাড়ছে। ২০২২ সালে দেশে প্রায় ৭৫ লক্ষ এসি বিক্রি হয়েছে।
এসির অতিব্যবহারের ফলে ত্বকের স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ও স্থিতিস্থাপকতা কমে যেতে পারে, যা সময়ের আগেই ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলতে পারে।এছাড়া, এসির অতিব্যবহারের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। কারণ এসি বাতাসের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে নাক ও গলার শ্লেষ্মা ঝিল্লি শুকিয়ে যায় এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে না।
এসি আমাদের জীবনযাত্রাকে আরামদায়ক করে তুলেছে। কিন্তু এর অতিব্যবহার যেন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়ে ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এসি ব্যবহারের পাশাপাশি নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করা এবং মাঝে মাঝে বাইরের তাজা বাতাসে সময় কাটানো উচিত। এভাবেই আমরা এসির সুবিধা ভোগ করার পাশাপাশি আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো রাখতে পারব।
মন্তব্য করুন