ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) ২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মাত্র ৬টি রাজনৈতিক দলকে জাতীয় দলের স্বীকৃতি দিয়েছে. এই ৬টি দল হলো ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP), ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (INC), বহুজন সমাজ পার্টি (BSP), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) বা CPI(M), আম আদমি পার্টি (AAP) এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (NPP). উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (NCP) এবং কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (CPI) তাদের জাতীয় দলের মর্যাদা হারিয়েছে, একই সময়ে AAP জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেয়েছে. বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে এই জাতীয় দলগুলো দেশের রাজনৈতিক কাঠামোর মূল ভিত্তি তৈরি করে এবং কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে.
জাতীয় দলের স্বীকৃতির মানদণ্ড
নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত কঠোর মানদণ্ড পূরণ করতে না পারলে কোনো রাজনৈতিক দল জাতীয় দলের স্বীকৃতি পায় না. একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেতে হলে তিনটি শর্তের মধ্যে যেকোনো একটি পূরণ করতে হয়. প্রথম শর্ত হলো, কমপক্ষে চারটি রাজ্যে রাজ্য দল হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হবে. দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী, সাম্প্রতিক লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে কমপক্ষে চারটি রাজ্যে মোট বৈধ ভোটের অন্তত ৬ শতাংশ পেতে হবে এবং সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে কমপক্ষে ৪ জন সাংসদ থাকতে হবে.
তৃতীয় শর্তটি হলো, লোকসভায় মোট আসনের কমপক্ষে ২ শতাংশ জিততে হবে এবং সেই আসনগুলো কমপক্ষে তিনটি ভিন্ন রাজ্য থেকে আসতে হবে. ২০১৬ সালে নির্বাচন কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি সংশোধন করে বলে যে, পরপর দুটি নির্বাচনের পর স্বীকৃতি পর্যালোচনা করা হবে, আগে প্রতিটি নির্বাচনের পর এই পর্যালোচনা হতো. এর ফলে একটি রাজনৈতিক দল পরবর্তী নির্বাচনে মানদণ্ড পূরণ করতে না পারলেও তার স্বীকৃতি বজায় থাকে, কিন্তু তার পরের নির্বাচনেও যদি মানদণ্ড পূরণ না হয় তাহলে স্বীকৃতি বাতিল হয়ে যায়.
জাতীয় ও রাজ্য দলের পার্থক্য
জাতীয় দল এবং রাজ্য দলের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে যা তাদের রাজনৈতিক প্রভাব এবং সুবিধাগুলো নির্ধারণ করে. জাতীয় দলের নির্বাচনী প্রতীক সারা ভারতে সংরক্ষিত থাকে, যেখানে রাজ্য দলের প্রতীক শুধুমাত্র নির্দিষ্ট রাজ্যে সংরক্ষিত থাকে. জাতীয় দলগুলো কেন্দ্রীয় সরকার গঠন এবং জাতীয় নীতি নির্ধারণে সরাসরি ভূমিকা পালন করে, অন্যদিকে রাজ্য দলগুলো মূলত রাজ্য সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং জাতীয় জোট সমর্থন করতে পারে.
ভারতের ৬টি স্বীকৃত জাতীয় রাজনৈতিক দল
ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)
ভারতীয় জনতা পার্টি ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে দেশের বৃহত্তম ও শাসক রাজনৈতিক দল. দলের নির্বাচনী প্রতীক হলো পদ্ম (কমল ফুল) এবং বর্তমান সভাপতি হলেন জে পি নাড্ডা. ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে BJP ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৪০টি আসন জিতে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে. রাজ্যসভায় দলের ১০৩টি আসন রয়েছে এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় মোট ১,৬৫৬টি আসন রয়েছে.
বিজেপি বর্তমানে ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ১৫টিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছে এবং আরও ৫টি রাজ্যে জোট সরকারের অংশীদার হিসেবে আছে. দলটি দক্ষিণপন্থী থেকে চরম দক্ষিণপন্থী রাজনীতি অনুসরণ করে এবং হিন্দুত্ব, রক্ষণশীলতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ওপর জোর দেয়. রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) সাংগঠনিক সমর্থন এবং শক্তিশালী তৃণমূল নেটওয়ার্ক BJP-এর রাজনৈতিক সাফল্যের মূল কারণ।
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ক্ষমতায় থাকা ৫টি দল: স্বাধীনতা থেকে বর্তমান পর্যন্ত
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (INC)
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৮৮৫ সালের ২৮ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ভারতের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল. দলের নির্বাচনী প্রতীক হলো হাতের পাঞ্জা এবং বর্তমান সভাপতি মল্লিকার্জুন খারগে. ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ১০১টি আসন জিতেছে যা বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি. রাজ্যসভায় দলের ২৭টি আসন এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় ৬৫৩টি আসন রয়েছে.
কংগ্রেস বর্তমানে ৩টি রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছে এবং আরও ৩টি রাজ্যে জোট সরকারের সহযোগী দল হিসেবে কাজ করছে. দলটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক অবস্থান অনুসরণ করে এবং উদারনীতি, সামাজিক গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও নাগরিক জাতীয়তাবাদের সমর্থক. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় ধরে শাসন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলটির একটি শক্তিশালী উত্তরাধিকার রয়েছে।
আম আদমি পার্টি (AAP)
আম আদমি পার্টি ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০২৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় দলের স্বীকৃতি পায়. দলের নির্বাচনী প্রতীক ঝাড়ু যা দুর্নীতির বিরুদ্ধে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির প্রতীক. দলের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন. লোকসভায় AAP-এর ৩টি আসন, রাজ্যসভায় ১০টি আসন এবং বিভিন্ন বিধানসভায় ১২২টি আসন রয়েছে.
আম আদমি পার্টি মূলত দিল্লি ও পাঞ্জাবে শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে এবং ১টি রাজ্যে (পাঞ্জাব) মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছে. দলটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক অবস্থানে বিশ্বাসী এবং জনকল্যাণ, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, জনতুষ্টিবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে. অ্যান্টি-করাপশন আন্দোলন থেকে উঠে আসা এই দলটি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়ে জনপ্রিয় কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরিচিত।
Loksabha 2024: কেন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না বিজেপি? [রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ]
বহুজন সমাজ পার্টি (BSP)
বহুজন সমাজ পার্টি ১৯৮৪ সালের ১৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর নির্বাচনী প্রতীক হলো হাতি যা শক্তি, স্থিতিশীলতা এবং দুর্বল শ্রেণীর ক্ষমতায়নের প্রতীক. দলের প্রতিষ্ঠাতা কাঁশীরাম এবং বর্তমান সভাপতি মায়াবতী. BSP-এর লোকসভায় কোনো আসন নেই, রাজ্যসভায় ১টি আসন এবং বিভিন্ন বিধানসভায় মাত্র ৩টি আসন রয়েছে. দলটি কেন্দ্র-বাম রাজনৈতিক অবস্থান অনুসরণ করে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার, আত্মসম্মান ও অম্বেদকরবাদের নীতি মেনে চলে.
বর্তমানে BSP কোনো রাজ্যে সরকার গঠন করেনি, তবে অতীতে উত্তরপ্রদেশে একাধিকবার সরকার গঠন করেছে এবং মায়াবতী চারবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দলটি মূলত দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে এবং ডঃ বি আর অম্বেদকরের মতাদর্শ অনুসরণ করে সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে চলেছে।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) – CPI(M)
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) ১৯৬৪ সালের ৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দলের নির্বাচনী প্রতীক হলো হাতুড়ি, কাস্তে ও তারা যা শ্রমিক, কৃষক ও শ্রমজীবী শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে. বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি এবং দলটি বামপন্থী রাজনীতি, মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার অনুসারী. লোকসভায় CPI(M)-এর ৪টি আসন, রাজ্যসভায় ৪টি আসন এবং বিধানসভায় ৮০টি আসন রয়েছে.
দলটি বর্তমানে ১টি রাজ্যে (কেরালা) মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছে এবং আরও ২টি রাজ্যে জোট সরকারের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে. ঐতিহাসিকভাবে, CPI(M) পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর (১৯৭৭-২০১১) এবং কেরালায় বিভিন্ন সময়ে সরকার গঠন করেছে। দলটি শ্রমিক অধিকার, ভূমি সংস্কার এবং সামাজিক সমতার জন্য লড়াই করে এবং সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (NPP)
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে আসা প্রথম জাতীয় দল. দলের বর্তমান সভাপতি কনরাড সাংমা যিনি মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী. NPP লোকসভায় কোনো আসন না পেলেও রাজ্যসভায় ১টি আসন এবং বিভিন্ন বিধানসভায় ৫০টি আসন রয়েছে. দলটি কেন্দ্র-দক্ষিণপন্থী রাজনীতি অনুসরণ করে এবং রক্ষণশীলতা ও আঞ্চলিকতাবাদে বিশ্বাস করে.
NPP বর্তমানে ১টি রাজ্যে (মেঘালয়) মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছে এবং আরও ২টি রাজ্যে জোট সরকারে অংশীদার. দলটি মূলত মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং অরুণাচল প্রদেশের মতো উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। আঞ্চলিক সমস্যা ও উত্তর-পূর্বের স্বার্থ রক্ষায় NPP একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং জাতীয় রাজনীতিতে উত্তর-পূর্বের কণ্ঠস্বর তুলে ধরে।
জাতীয় দলগুলোর তুলনামূলক পরিসংখ্যান
| দলের নাম | প্রতীক | প্রতিষ্ঠা | লোকসভা আসন | রাজ্যসভা আসন | বিধানসভা আসন | মুখ্যমন্ত্রী পদ |
|---|---|---|---|---|---|---|
| BJP | পদ্ম (কমল) | ১৯৮০ | ২৪০ | ১০৩ | ১,৬৫৬ | ১৫ |
| INC | হাতের পাঞ্জা | ১৮৮৫ | ১০১ | ২৭ | ৬৫৩ | ৩ |
| AAP | ঝাড়ু | ২০১২ | ৩ | ১০ | ১২২ | ১ |
| BSP | হাতি | ১৯৮৪ | ০ | ১ | ৩ | ০ |
| CPI(M) | হাতুড়ি, কাস্তে ও তারা | ১৯৬৪ | ৪ | ৪ | ৮০ | ১ |
| NPP | (সংরক্ষিত প্রতীক) | ২০১৩ | ০ | ১ | ৫০ | ১ |
জাতীয় দল স্বীকৃতি হারানোর ঘটনা
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে নির্বাচন কমিশন তিনটি দলের জাতীয় স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে যা ভারতীয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা. তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (NCP) এবং কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (CPI) দুটি পরপর সংসদীয় নির্বাচন এবং ২১টি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে জাতীয় দলের মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের স্বীকৃতি হারায়. নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, এই দলগুলো পরবর্তী নির্বাচনী চক্রে ভালো পারফরম্যান্স করলে পুনরায় জাতীয় দলের মর্যাদা ফিরে পেতে পারে.
TMC মূলত পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী এবং সেখানে ২০১১ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে, কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি না থাকায় জাতীয় দলের মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। NCP মহারাষ্ট্রে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হলেও অন্যত্র দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে স্বীকৃতি হারায়। CPI-এর ক্ষেত্রে কেরালা ও তামিলনাড়ু ছাড়া অন্য রাজ্যে দলের উপস্থিতি খুবই সীমিত থাকায় জাতীয় মানদণ্ড অর্জন সম্ভব হয়নি।
জাতীয় দলের সুবিধা ও বিশেষ অধিকার
জাতীয় দল হিসেবে স্বীকৃতি পেলে একটি রাজনৈতিক দল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা ও বিশেষ অধিকার পায় যা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো সারা দেশে একটি সংরক্ষিত নির্বাচনী প্রতীক যা অন্য কোনো দল ব্যবহার করতে পারে না. সরকারি মালিকানাধীন টেলিভিশন ও রেডিওতে বিনামূল্যে সম্প্রচার সময় পাওয়ার সুবিধা রয়েছে যা নির্বাচনী প্রচারে বিশাল ভূমিকা পালন করে.
নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে পরামর্শ দেওয়ার অধিকার এবং নির্বাচনী নিয়ম-কানুন প্রণয়নে মতামত দেওয়ার সুযোগ পায় জাতীয় দলগুলো. এছাড়া জাতীয় দলগুলো নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়. ভোটার শিক্ষা ও সচেতনতা কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার এবং নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য সহজে পাওয়ার সুবিধাও জাতীয় দলগুলো উপভোগ করে থাকে।
ভারতীয় রাজনীতিতে জাতীয় দলের গুরুত্ব
জাতীয় দলগুলো ভারতের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে. এই দলগুলো কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং জাতীয় নীতি নির্ধারণে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করে. বর্তমানে BJP নেতৃত্বাধীন NDA জোট এবং Congress নেতৃত্বাধীন INDIA জোট ভারতীয় রাজনীতির দুই প্রধান মেরু তৈরি করেছে যেখানে অন্যান্য জাতীয় দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জাতীয় দলগুলো বিভিন্ন অঞ্চল, ভাষা, ধর্ম ও সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষের স্বার্থ প্রতিনিধিত্ব করে এবং জাতীয় ঐকমত্য তৈরিতে সাহায্য করে। AAP-এর মতো নতুন দল জাতীয় মর্যাদা পাওয়ায় প্রমাণিত হয় যে ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গতিশীল এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়। NPP-এর জাতীয় দল হওয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিনিধিত্বকে শক্তিশালী করেছে এবং আঞ্চলিক দলগুলোর জন্য জাতীয় মঞ্চে আসার পথ দেখিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও দায়িত্ব
ভারতের নির্বাচন কমিশন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২৪ অনুযায়ী একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা যা দেশের নির্বাচন পরিচালনা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর স্বীকৃতি প্রদানের দায়িত্ব পালন করে. নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় বা রাজ্য দল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং নিয়মিত পর্যালোচনা করে. ২০২৫ সালের জুন মাসে নির্বাচন কমিশন ৩৪৫টি নিবন্ধিত কিন্তু অস্বীকৃত রাজনৈতিক দল (RUPPs) এর নাম দলের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে.
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ প্রকাশনা অনুযায়ী (২০২৪ সালের মার্চ), ভারতে ৬টি জাতীয় দল, ৫৮টি রাজ্য দল এবং ২,৭৬৩টি অস্বীকৃত দল রয়েছে. কমিশন একটি অনলাইন পোর্টাল “Political Parties Registration Tracking Management System” (PPRTMS) চালু করেছে যার মাধ্যমে আবেদনকারীরা তাদের দলের আবেদনের অবস্থা ট্র্যাক করতে পারে. নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ ও আলোচনা করে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উন্নতির জন্য তাদের মতামত গ্রহণ করে.
ভারতের নির্বাচন কমিশন স্বীকৃত ৬টি জাতীয় রাজনৈতিক দল – BJP, INC, BSP, CPI(M), AAP এবং NPP – দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে চলেছে। এই দলগুলো বিভিন্ন মতাদর্শ, অঞ্চল এবং সামাজিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে ভারতের বহুত্ববাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই দলগুলোর পারফরম্যান্স ভারতীয় রাজনীতির গতিশীল প্রকৃতি এবং জনগণের পরিবর্তনশীল পছন্দকে প্রতিফলিত করে। নির্বাচন কমিশনের কঠোর মানদণ্ড ও নিয়মিত পর্যালোচনা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে যে শুধুমাত্র প্রকৃত জাতীয় উপস্থিতি ও জনসমর্থন আছে এমন দলগুলোই জাতীয় মর্যাদা ধরে রাখতে পারে। ভবিষ্যতে নতুন দল জাতীয় মর্যাদা অর্জন করতে পারে এবং বিদ্যমান দলগুলোও তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে মর্যাদা হারাতে বা ফিরে পেতে পারে, যা ভারতীয় গণতন্ত্রের জীবন্ত ও প্রতিযোগিতামূলক প্রকৃতিকে তুলে ধরে।











