Iraq Child Marriage Law Proposal 2024: ইরাকের সংসদে একটি বিতর্কিত আইন প্রস্তাব করা হয়েছে যা মেয়েদের বিয়ের বয়স ৯ বছর এবং ছেলেদের বিয়ের বয়স ১৫ বছর করার প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাবিত আইনটি দেশের বর্তমান ব্যক্তিগত অবস্থা আইন সংশোধন করতে চায়, যা বর্তমানে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করেছে। এই প্রস্তাবটি মানবাধিকার সংগঠন, নারী অধিকার কর্মী এবং সুশীল সমাজের কাছ থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
প্রস্তাবিত আইনের মূল বিষয়বস্তু
প্রস্তাবিত আইনটি নাগরিকদের পারিবারিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ বা বেসামরিক বিচার ব্যবস্থার মধ্যে বেছে নেওয়ার অনুমতি দেবে। এটি ১৯৫৯ সালের ব্যক্তিগত অবস্থা আইনের পরিবর্তন করবে, যা পারিবারিক আইনের কর্তৃত্ব ধর্মীয় নেতাদের থেকে রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত করেছিল।
– মেয়েদের বিয়ের বয়স ৯ বছর এবং ছেলেদের বিয়ের বয়স ১৫ বছর করা
– নাগরিকদের পারিবারিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ বা বেসামরিক বিচার ব্যবস্থার মধ্যে বেছে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া
– বিবাহিত দম্পতিদের সুন্নি বা শিয়া মতবাদের মধ্যে বেছে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া
– শিয়া ও সুন্নি ওয়াকফ অফিসগুলিকে আদালতের পরিবর্তে বিয়ে সম্পন্ন করার অনুমতি দেওয়া
Modi 3.0 এর প্রথম বাজেট, ভারতের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত!
প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
এই প্রস্তাবিত আইনটি ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন, নারী অধিকার কর্মী এবং সুশীল সমাজ এই আইনের বিরোধিতা করছে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে এই আইন:
– শিশু বিবাহ ও শিশু শোষণের হার বাড়াবে
– মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কল্যাণের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে
– স্কুল ছাড়ার হার, অল্প বয়সে গর্ভধারণ ও পারিবারিক সহিংসতা বাড়াবে
– উত্তরাধিকার, বিবাহবিচ্ছেদ ও শিশুর হেফাজত সংক্রান্ত অধিকার ক্ষুণ্ন করবে
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক সারাহ সানবার বলেছেন, “এই আইন পাস হলে দেখা যাবে দেশটি সামনে না এগিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।”
ইরাক উইমেন্স নেটওয়ার্কের সদস্য আমাল কাবাশি মন্তব্য করেছেন যে এই সংশোধনী “একটি ইতিমধ্যেই রক্ষণশীল সমাজে পারিবারিক বিষয়ে পুরুষদের আধিপত্যের জন্য বিশাল সুযোগ দেয়।”
পরিসংখ্যান ও তথ্য
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ইরাকে ইতিমধ্যেই ২৮% মেয়ে ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে করে। এই প্রস্তাবিত আইন পাস হলে এই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে যে ইরাকে প্রতি বছর হাজার হাজার অনিবন্ধিত বিয়ে হয়, যার মধ্যে শিশু বিবাহও রয়েছে। এসব বিয়ে বর্তমান আইন লঙ্ঘন করে ধর্মীয় নেতারা সম্পন্ন করে থাকেন।
সম্ভাব্য প্রভাব
এই আইন পাস হলে এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি হতে পারে:
– শিশু বিবাহের হার বৃদ্ধি
– মেয়েদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব
– অল্প বয়সে গর্ভধারণ ও মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধি
– পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি
– নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হ্রাস
– সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য বৃদ্ধি
– ধর্মীয় মৌলবাদের প্রভাব বৃদ্ধি
রূপশ্রী প্রকল্প: কিশোরী ও নারীদের সশক্তিকরণের পথে অগ্রগতি
আইনের পক্ষে যুক্তি
আইনের সমর্থকরা দাবি করছেন যে এটি ইসলামি আইনকে মানকীকরণ করবে এবং কম বয়সী মেয়েদের “অনৈতিক সম্পর্ক” থেকে রক্ষা করবে। তবে বিরোধীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে এই যুক্তি শিশু বিবাহের কঠোর বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে।
সংসদ সদস্য রায়েদ আল-মালিকি, যিনি এই বিলটি উত্থাপন করেছেন, দাবি করেছেন যে এটি বিয়ের আইনি বয়স কমানোর কোনো সুযোগ দেবে না। তিনি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আইনের বিরোধিতা একটি দুষ্ট এজেন্ডা থেকে আসছে যা ইরাকি জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে তাদের বিশ্বাস দ্বারা নির্ধারিত ব্যক্তিগত অবস্থা অস্বীকার করতে চায়।”
প্রতিবাদ ও বিরোধিতা
এই বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছে:
– নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলি এই প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে
– ইরাকি নারী সংসদ সদস্যদের একটি জোট এই বিলের বিরোধিতা করছে
– বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছে
– তাহরির স্কোয়ারে বিক্ষোভকারীরা “নারী দাসত্বের যুগ শেষ” এবং “শিশুদের বিয়ের বিরুদ্ধে” লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশ করেছেন
অর্গানাইজেশন অফ উইমেন্স ফ্রিডম ইন ইরাকের প্রেসিডেন্ট ইয়ানার মোহাম্মদ বলেছেন, “তাদের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হল ইরাকি নারী ও সুশীল সমাজকে এমন একটি আইন দিয়ে ভয় দেখানো যা আধুনিক যুগে ইরাকি নারীদের অর্জিত সমস্ত অধিকার কেড়ে নেয়।”
ইরাকে প্রস্তাবিত এই আইনটি দেশের নারী ও শিশু অধিকারের ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক পশ্চাদপদ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি শিশু বিবাহ, লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীদের অধিকার হরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় নাগরিক সমাজ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে এবং ইরাকের সরকারকে এটি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। এই বিতর্কিত আইনের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত, কিন্তু এটি ইরাকের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্তব্য করুন