কলকাতায় চলমান জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অনিকেত মাহাতোর স্বাস্থ্যের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। ১১৫ ঘণ্টা ধরে অনশনরত অবস্থায় থাকার ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে এবং কোমায় যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো গত শনিবার থেকে অন্যান্য ৬ জন জুনিয়র ডাক্তারের সাথে অনশন আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রধান দাবি হলো আর জি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অনশনের এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অনিকেত মাহাতোর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তাঁর রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তিনি কোমায় চলে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Junior Doctors Hunger Strike: সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে আমরণ অনশনে ৬ জুনিয়র ডাক্তার
কলকাতা পুলিশ অনিকেত মাহাতোর স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অনিকেত মাহাতো চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁদের দাবিগুলি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন।
অনিকেত মাহাতোর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি প্রায়ই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন এবং কথা বলতে পারছেন না। তাঁর রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেছে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে তিনি যে কোনো সময় কোমায় চলে যেতে পারেন।
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর। প্রথমে তাঁরা ৪২ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে ২১ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারের আশ্বাসের পর তাঁরা কাজে ফিরে আসেন। কিন্তু দাবিগুলি পূরণ না হওয়ায় গত ১ অক্টোবর থেকে আবার কর্মবিরতি শুরু করেন এবং ৭ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু করেন।
বন্যা দুর্গতদের পাশে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে চিকিৎসা শিবির
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রধান দাবিগুলি হল:
১. আর জি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার
২. স্বাস্থ্য সচিব এন এস নিগমকে অপসারণ
৩. প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি
৪. হাসপাতালগুলিতে কেন্দ্রীয় রেফারেল সিস্টেম চালু করা
৫. শয্যা খালি থাকার তথ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা
৬. সিসিটিভি ক্যামেরা, অন-কল রুম ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা
৭. হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো
৮. মহিলা পুলিশ কর্মী নিয়োগ করা
৯. ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদ পূরণ করা
রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি মেনে নেওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। এদিকে অনিকেত মাহাতোর স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় তাঁর সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা সরকারকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে এই সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে অনশন করলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং কোমায় যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই অনিকেত মাহাতোর অবিলম্বে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
কলকাতা মেডিকেল কলেজের একজন বরিষ্ঠ চিকিৎসক জানিয়েছেন, “অনশনের ফলে শরীরে পানি ও খনিজের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে কিডনি ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে এই অবস্থা চললে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যায় এবং কোমায় যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।”
অনিকেত মাহাতোর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেছেন। তাঁর বাবা বলেছেন, “আমরা খুবই চিন্তিত। আমি ছেলেকে অনুরোধ করেছি অনশন ভাঙতে। কিন্তু সে শুনছে না। সরকার যদি একটু এগিয়ে আসে তাহলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
R.G Kar Doctor Rape-Murder: চিকিৎসক হত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে আন্দোলন
এদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা সরকারকে দ্রুত জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অমলেন্দু চৌধুরী বলেছেন, “জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি ন্যায্য। সরকারের উচিত তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করা। অনিকেত মাহাতোর জীবন বিপন্ন হওয়ার আগেই সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
কলকাতা মেডিকেল কলেজের একজন প্রাক্তন অধ্যাপক জানিয়েছেন, “চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। তাঁদের দাবিগুলি মেনে নিলে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নত হবে। সরকারের উচিত এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
অনিকেত মাহাতোর স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় তাঁর সহকর্মীরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা জানিয়েছেন, অনিকেতের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলেও তিনি অনশন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁরা আশা করছেন সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ করবে এবং তাঁদের দাবিগুলি মেনে নেবে।
এই পরিস্থিতিতে সকলের দৃষ্টি এখন রাজ্য সরকারের দিকে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি মেনে নিয়ে এই সংকটের অবসান ঘটানো এবং অনিকেত মাহাতোর জীবন রক্ষা করা সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনিকেত মাহাতোর স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও খারাপ হলে তা একটি বড় ট্র্যাজেডিতে পরিণত হতে পারে।