৮১ বছর পর, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কর্শিয়াংয়ের টয় ট্রেনের টার্নটেবল আবার চালু হয়েছে। দীর্ঘদিন অকেজো থাকা এই টার্নটেবলটি সম্প্রতি চার মাস ধরে পুনর্নির্মাণের পর পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এটি টয় ট্রেনের কার্যক্রমে নতুন গতি এবং কার্যকারিতা যোগ করবে।
কর্শিয়াংয়ের এই টার্নটেবলটি ১৯৪৩ সাল থেকে অকেজো ছিল। এর ফলে ট্রেনের দিক পরিবর্তনের জন্য জটিল পদ্ধতি ব্যবহার করতে হত। কর্শিয়াং স্টেশনে কোনো লুপ না থাকায়, ট্রেনের ইঞ্জিনকে পেছন দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে হত, যা সময় এবং জ্বালানি ব্যয় বাড়াতো। পুনরুজ্জীবিত টার্নটেবলটি এখন সহজেই ট্রেনের দিক পরিবর্তন করতে পারবে, মাত্র কয়েক মিনিটে ১৮০° ঘুরিয়ে।
এই প্রকল্পটি দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের (DHR) ঐতিহ্য সংরক্ষণের অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হয়েছে। DHR-এর পরিচালক ঋষভ চৌধুরী বলেছেন, “টার্নটেবলের পুনরুদ্ধার শুধু ঐতিহ্য সংরক্ষণ নয়, বরং কার্যকারিতা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি জ্বালানি সাশ্রয় করবে এবং ট্রেন পরিচালনা আরও মসৃণ হবে।”
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, যা ১৯৯৯ সালে UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের মর্যাদা পেয়েছে, তার ইতিহাসে এই টার্নটেবলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৯ থেকে ১৮৮১ সালের মধ্যে নির্মিত এই রেলপথটি পাহাড়ি অঞ্চলে পরিবহন সহজ করার জন্য তৈরি হয়েছিল। এর সংকীর্ণ গেজের রেলপথ এবং লুপ ডিজাইন সেই সময়ের প্রকৌশল দক্ষতার প্রতীক।
দার্জিলিংয়ের আরেকটি টার্নটেবল বর্তমানে চালু রয়েছে এবং কর্শিয়াংয়ের পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে DHR আরও উন্নত সেবা দিতে সক্ষম হবে। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে পর্যটকদের চাহিদা পূরণের জন্য DHR তাদের জয়রাইড সংখ্যা আট থেকে বারোতে বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।
এছাড়াও, এই ঐতিহাসিক রেলপথটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। দার্জিলিং থেকে ঘুম পর্যন্ত যাত্রা করার সময় যাত্রীরা পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করেন এবং ঐতিহাসিক বাটাসিয়া লুপের মতো স্থানে ট্রেনের বিশেষ লুপ ডিজাইন দেখার সুযোগ পান।
কর্শিয়াং টার্নটেবলের পুনরুজ্জীবন শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং এটি দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে অতীতের ঐতিহ্যকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মিশিয়ে নতুন করে জীবন্ত করা সম্ভব।