১০ বছর শিক্ষকতা করেও অনুপযুক্ত, ‘দাগি’দের বদলে নতুন ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

গত বুধবার দুপুরে কলকাতা বিধানসভা চত্বরে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দীর্ঘ ১০ বছর শিক্ষকতা সত্ত্বেও ‘দাগি’ হিসেবে বিবেচিত যাঁরা সনদ উত্তরণে অযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছেন, তাঁদের বদলে নতুন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ…

Chanchal Sen

 

গত বুধবার দুপুরে কলকাতা বিধানসভা চত্বরে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দীর্ঘ ১০ বছর শিক্ষকতা সত্ত্বেও ‘দাগি’ হিসেবে বিবেচিত যাঁরা সনদ উত্তরণে অযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছেন, তাঁদের বদলে নতুন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০০ জন কাজে ফিরতে পারেন, যাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কোনো বিঘ্ন না ঘটে।

একাধিক স্কুল পরিদর্শন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সুপারিশের পর মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণা এসেছে। তিনি জানান, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষকরা বারবার দেড় কোটি টাকার ‘যাচাই’ প্রতিবেদনেও নির্বাচনী অযোগ্য প্রকাশ পেয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করলেও সরকারি নির্দেশনার বাইরে পড়ণে অনিয়ম দেখা গেছে।

প্রথম পর্যায়ের তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে, শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে লাইব্রেরি পরিচালনা, শিক্ষার্থী মূল্যায়ন রিপোর্ট অযোগ্যতা ও নিয়মিত ক্লাসবুকের নিরীক্ষায় অসামঞ্জস্যতা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় স্বীকৃত পরীক্ষায় প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষক ‘ফেইল’ হয়েছেন। এ বিষয়ে সাংগঠনিক তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক স্বামী বাসুদেব পাল জানান, “প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, অনেকে আসল পরীক্ষার পরিবর্তে পলীগ্রাফি নকল করেছে।”

SSC Scam West Bengal: সুপ্রিম কোর্ট রিভিউ পিটিশন খারিজ, ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ বহাল

পুলিশের ডিআইজি-র কাছে প্রেরিত অভিযোগ অনুসারে, কয়েক জন শিক্ষকসহ শিক্ষা দফতরের দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ মেলে। তাদের বিরুদ্ধে পঞ্চম দফায় অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। রাজ্য শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, “নির্বাচিত কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি়। প্রয়োজনে FIR দায়ের করা হবে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়ম চলার সুযোগ দেওয়া যাবেনা। ‘দাগি’দের জন্য স্থান নেই। আমি চাই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা বাধাহীন হোক।” তিনি অযোগ্য প্রমাণিতদের বদলে নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করেছেন।

রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষায় ২০ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। এদের মধ্যে অনিয়মের দায় তুলনা করলে অযোগ্য প্রমাণিতদের সংখ্যা প্রায় ৫০০। নতুন নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি কার্যদক্ষতা যাচাইয়ের জন্য মাঠপর্যায়ের ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হবে।

রাজ্যের বিরোধী দল বলেন, “এতো দিন ধরে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এত লোভ-দুর্নীতি? সরকারের তদারকিতে কেন এতক্ষণ নজর ছিল না?” তবে সরকারি সূত্রের মতে, তদন্তের ধাপ বাড়াতে এই নতুন পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছিল।

২০১৮ সালে এ জাতীয় এক তদন্তে রাজ্য সরকারের প্রাথমিক স্কুলে প্রায় ৩০০ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। তখনও অনেকে পুনর্বহাল হননি। সে ঘটনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার আরও কঠোর নির্বাচনপদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে।

দুর্গাপূজার আগেই সরকারি কর্মচারীদের হাতে মিলবে বোনাস ও অগ্রিম! নবান্নের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা বাড়াতে রাজ্য তথ্য প্রযুক্তি দপ্তর এবং শিক্ষাব্যুরো টিম যৌথভাবে অ্যালগরিদমিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। এতে আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ ইতিহাস, মেধা ও আচরণগত দক্ষতা পরিমাপ করা হবে।

নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুযায়ী, আবেদনকারীদের মাঝে প্রথম পর্যায়ে অনলাইন লিখিত পরীক্ষা, দ্বিতীয় পর্যায়ে স্কুল পর্যায়ে ফর্মেটিভ অ্যাসেসমেন্ট, তৃতীয় পর্যায়ে মনিটরিং প্যানেলের সাক্ষাৎকার ও চূড়ান্ত স্বীকৃতি মিলবে। আগামী বছরের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম দফার নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।