Pre-diabetes information signs symptom: প্রি-ডায়াবেটিস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রি-ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কিন্তু ডায়াবেটিসের মতো উচ্চ নয়। এই অবস্থায় শরীরের কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দেয় না, যাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলা হয়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রি-ডায়াবেটিসের লক্ষণ
প্রি-ডায়াবেটিসের কোনো স্পষ্ট লক্ষণ নেই। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যেতে পারে:
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা
- ঘন ঘন প্রস্রাব, বিশেষত রাতে
- ক্লান্তি
- অস্পষ্ট দৃষ্টি
- ক্ষত বা কাটা জায়গা সহজে না শুকানো
এছাড়াও acanthosis nigricans নামক একটি চর্মরোগ দেখা যেতে পারে, যেখানে গলা, কনুই, হাঁটু ইত্যাদি জায়গায় ত্বক কালো হয়ে যায়।
প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কারণ
প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ানোর কিছু কারণ রয়েছে:
- বয়স: ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের ঝুঁকি বেশি
- ওজন: BMI ২৫ এর বেশি হলে ঝুঁকি বাড়ে
- শারীরিক অবস্থা: কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি থাকলে ঝুঁকি বেশি
- জাতিগত কারণ: আফ্রিকান আমেরিকান, এশিয়ান আমেরিকান, হিস্পানিক ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে প্রি-ডায়াবেটিসের হার বেশি
- খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টি পানীয় ইত্যাদি খেলে ঝুঁকি বাড়ে
- শারীরিক অনিয়ম: নিয়মিত ব্যায়াম না করলে ঝুঁকি বেশি
- পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারে কারো ডায়াবেটিস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে
- ধূমপান: ধূমপান ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়
- অন্যান্য রোগ: উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বেশি থাকা, PCOS ইত্যাদি
চাপে আছেন? জানুন হাই-লো প্রেসারের গোপন সংকেত
প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর উপায়
প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু সহজ উপায় রয়েছে:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা
- সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া
- প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা
- ফলমূল ও সবজি বেশি খাওয়া
- লাল মাংসের পরিবর্তে মাছ বা হালকা মাংস খাওয়া
- চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া
- মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলা
২. নিয়মিত ব্যায়াম করা
- সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করা
- হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি করা যেতে পারে
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা
৩. ওজন কমানো
- শরীরের ওজনের ৫-৭% কমালেও উপকার পাওয়া যায়
- ২০০ পাউন্ড ওজন থাকলে ১০-১৪ পাউন্ড কমানো উচিত
৪. ধূমপান ত্যাগ করা
- ধূমপান ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়
- ধূমপান ত্যাগ করলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে
৫. পর্যাপ্ত ঘুম
- প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত
- অপর্যাপ্ত ঘুম প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়
৬. স্ট্রেস কমানো
- নিয়মিত ধ্যান করা
- যোগব্যায়াম করা
- শখের কাজে সময় দেওয়া
প্রি-ডায়াবেটিসের চিকিৎসা
প্রি-ডায়াবেটিস নির্ণয় হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা হয়:
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন: খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়াম
- ওজন কমানো
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা
- প্রয়োজনে ঔষধ সেবন (যেমন মেটফরমিন)
নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
“পুরুষদের জন্য অশ্বগন্ধার ৭টি অবাক করা উপকারিতা –
প্রি-ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব
প্রি-ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বাড়ছে। নিচের টেবিলে বিভিন্ন দেশে প্রি-ডায়াবেটিসের হার দেখানো হলো:
দেশ | প্রি-ডায়াবেটিসের হার |
---|---|
যুক্তরাষ্ট্র | ৩৪.৫% |
চীন | ৩৫.৭% |
ভারত | ১০.৩% |
বাংলাদেশ | ২২.৪% |
জাপান | ৯.৫% |
প্রি-ডায়াবেটিস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, কিন্তু সঠিক পদক্ষেপ নিলে এটি প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। যদি আপনি প্রি-ডায়াবেটিসের লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রি-ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো যায়।