আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই সফর এখন গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ১৭ অগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকা তিনটি একদিনের এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের এই সিরিজটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উত্তেজনা এই সিরিজ বাতিলের পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষত, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার বিতর্কিত মন্তব্য এই সফরে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এল এম ফজলুর রহমান সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো দখলের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক ব্যবস্থা গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে ভারত ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বয়কটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একটি নিরীক্ষক সূত্র জানিয়েছে, “সফরটি সূচির অংশ হলেও এখনো কিছুই চূড়ান্ত নয়। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ভারতের বাংলাদেশ সফর না-ও হতে পারে। এমন সম্ভাবনাই বেশি”।
বিষয়টি নিয়ে বিসিসিআই সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলাম। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, “বিসিসিআই-এর সঙ্গে আমাদের ইতিবাচক কথাবার্তা হয়েছে। আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে এই সিরিজ আয়োজন করা নিয়েই নয়, এই সিরিজ কীভাবে পরিচালনা করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে”।
অবশ্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার মন্তব্য থেকে সরকারকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে। একটি বিজ্ঞপ্তিতে তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমানের ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে করা সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো স্রেফ তার ব্যক্তিগত এবং এসব মন্তব্য বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বা নীতির প্রতিফলন ঘটায় না।
রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির জন্য এই সফরের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ তারা উভয়েই টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিكেট থেকে অবসর নিয়েছেন। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখন একমাত্র ফরম্যাট যেখানে এই দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার একসাথে দেশের জার্সি পরে মাঠে নামেন। বাংলাদেশ সিরিজ বাতিল হলে তাদের পরবর্তী একসাথে খেলার সুযোগ আসবে অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, যেখানে ১৯ অক্টোবর পার্থে প্রথম একদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য এই বিলম্ব বিশেষভাবে হতাশাজনক কারণ আগামী তিন মাস কোনো একদিনের ম্যাচ নেই। বর্তমানে চলমান ইংল্যান্ড সফরে শুধুমাত্র টেস্ট সিরিজ রয়েছে, যেখানে রোহিত-কোহলি দুজনেই অনুপস্থিত। ২০ জুন থেকে শুরু হওয়া পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে শুভমন গিলের নেতৃত্বে খেলছে ভারতীয় দল।
বাংলাদেশ সিরিজের প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী, ১৭, ২০ ও ২৩ অগস্ট তিনটি একদিনের ম্যাচ এবং এর পরে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। একদিনের সিরিজে কোহলি ও রোহিত শর্মার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ছিল, কিন্তু টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলোতে তারা খেলবেন না কারণ উভয়েই এই ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন।
বিসিবি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই সিরিজ অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, “যদি এবার করা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্য কোনও সময়ে এই সিরিজ আমরা করতেই পারি। সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বিসিসিআই”।
আইসিসি অনুমোদিত ভবিষ্যৎ সফরসূচির (এফটিপি) অংশ হিসেবে এই সিরিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৭ সালের একদিনের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য এই ধরনের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ অপরিহার্য, বিশেষ করে রোহিত-কোহলির মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ফর্ম ঠিক রাখার জন্য।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি অব্যাহত থাকে এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি না হয়, তাহলে এই সিরিজ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে বিসিবি এবং বিসিসিআই উভয় বোর্ডই বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছে, যাতে ভবিষ্যতে এই সিরিজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীরা তাদের প্রিয় দুই তারকার পরবর্তী একসাথে খেলার অপেক্ষায় থাকবেন।