ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র নিভে গেল। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর, ২০২৪) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার হেনরি মায়ো মেমোরিয়াল হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন বিশ্ববিখ্যাত সরোদ শিল্পী ওস্তাদ আশীষ খাঁ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
ওস্তাদ আশীষ খাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সঙ্গীত জগতে। তাঁর অকাল প্রয়াণে শুধু ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতই নয়, সমগ্র বিশ্ব সঙ্গীত জগৎ হারালো এক অনন্য প্রতিভাকে। সেনিয়া মৈহার ঘরানার এই কিংবদন্তি শিল্পী ছিলেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নাতি এবং ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর পুত্র।
আশীষ খাঁর জন্ম হয় ১৯৩৯ সালের ৫ ডিসেম্বর মৈহরে। ছোটবেলা থেকেই তিনি সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর প্রথম গুরু ছিলেন তাঁর দাদা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। পরবর্তীতে তিনি তাঁর পিতা ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর কাছে তালিম নেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি প্রথম পাবলিক পারফরম্যান্স দেন আকাশবাণীর ন্যাশনাল প্রোগ্রামে।
আশীষ খাঁ শুধু একজন দক্ষ সরোদ বাদক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সফল শিক্ষক, কম্পোজার এবং পরিচালকও। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ আর্টস এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্তা ক্রুজ ক্যাম্পাসে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।
তাঁর অসামান্য প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ২০০৫ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সঙ্গীত সম্মান সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৬ সালে তাঁর অ্যালবাম “গোল্ডেন স্ট্রিংস অফ দ্য সরোদ” গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়।
আশীষ খাঁ শুধু ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি বিশ্ব সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও অসামান্য অবদান রেখেছেন। ১৯৬৯ সালে তিনি তবলা বাদক জাকির হোসেনের সাথে মিলে “শান্তি” নামে একটি ইন্ডো-আমেরিকান সঙ্গীত গ্রুপ গঠন করেন। এছাড়াও তিনি “দ্য থার্ড আই” নামে একটি ফিউশন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। আশীষ খাঁ বিভিন্ন জনপ্রিয় শিল্পীদের সাথে কাজ করেছেন। তাঁর সহযোগী শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন রবি শংকর, দ্য বিটলস, জর্জ হ্যারিসন, রিঙ্গো স্টার, এরিক ক্ল্যাপটন প্রমুখ। তিনি সত্যজিৎ রায়ের “অপুর সংসার”, “পরশ পাথর” এবং “জলসাঘর” ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কম্পোজ করেছেন।
না ফেরার দেশে জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড শিল্পী! ‘ফিরিয়ে দাও’ শোনা যাবে না আর.
আশীষ খাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গীত শিল্পীরা। তাঁরা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে আশীষ খাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত একজন মহান শিল্পীকে হারালো।আশীষ খাঁর জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পাই একজন প্রতিভাবান শিল্পী কীভাবে নিজের শিকড়কে আঁকড়ে ধরে বিশ্বের দরবারে নিজের স্থান করে নিতে পারেন। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন এবং একই সাথে পাশ্চাত্যের সঙ্গীতের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করেছেন।
আশীষ খাঁর মৃত্যুতে শুধু একজন শিল্পীকে হারানোর শোক নয়, একটি যুগের অবসান ঘটল। তাঁর সৃষ্ট সঙ্গীত চিরকাল মানুষের মনে বেঁচে থাকবে। তাঁর শিষ্যরা তাঁর শিক্ষা ও আদর্শকে বহন করে চলবেন, এটাই হবে তাঁর প্রতি সর্বোত্তম শ্রদ্ধাঞ্জলি।আশীষ খাঁর মৃত্যুতে শুধু ভারতই নয়, সমগ্র বিশ্ব হারালো এক অনন্য প্রতিভাকে। তাঁর সৃষ্ট সুরের মূর্ছনা চিরকাল বেঁচে থাকবে সঙ্গীত প্রেমীদের হৃদয়ে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।