: সঙ্গীতজগতে শোকের ছায়া
৮৩ বছর বয়সে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাংলা গণসঙ্গীতের প্রবাদপুরুষ প্রতুল মুখোপাধ্যায় (Pratul Mukhopadhyay)। “আমি বাংলায় গান গাই”-এর স্রষ্টা এই শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৫ জুন তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশালে। দেশভাগের পর পরিবারের সাথে চুচুড়ায় বসবাস শুরু করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় সুরারোপ করে সঙ্গীতজগতে আত্মপ্রকাশ। তাঁর সৃষ্টিকর্মের বৈশিষ্ট্য ছিল ঐতিহ্যের শিকড়ে আধুনিকতার সংমিশ্রণ।
: ৩০০-এর বেশি গান রচনা করেছেন, যার মধ্যে ১১টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।
: “আমি বাংলায় গান গাই” (১৯৯৪) গানটি বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আঞ্চলিক পরিচয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
: নকশাল আন্দোলন, শ্রমিক অধিকার ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে গান রচনা করেছেন।
না ফেরার দেশে জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড শিল্পী! ‘ফিরিয়ে দাও’ শোনা যাবে না আর
:
বছর | অ্যালবামের নাম | বৈশিষ্ট্য |
---|---|---|
১৯৯৪ | যেতে হবে | প্রথম একক অ্যালবাম |
২০০২ | স্বপনপুরে | সমকালীন সামাজিক ইস্যুভিত্তিক গান |
২০২০ | আপন সুরে ভাষার গান | বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি |
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি শুরু হয়:
: হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে।
: অন্ত্রের জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়।
: অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণ (সেপ্টিসেমিয়া) ও নিউমোনিয়া শনাক্ত।
: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে দেখা করতে যান।
:
উচ্চপ্রবাহ অক্সিজেন থেরাপি (HFNC)
ডায়ালিসিস (সপ্তাহে ৩ বার)
মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন
তাঁর গান শুধু শিল্পমাধ্যমই নয়, সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে:
২০১৬ সালে সিঙ্গুরে জমি ফেরত আন্দোলনে “আমি বাংলায় গান গাই” গেয়ে জনতা উদ্বেলিত করেন।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এই গানের লাইন ব্যবহার করে।
:
মাধ্যম | উদাহরণ |
---|---|
চলচ্চিত্র | “ক্রান্তি” (২০১১) চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার |
নাটক | ঢাকা ও কলকাতার নাট্যদলগুলি তাঁর গান মঞ্চস্থ করে |
শিক্ষা | পশ্চিমবঙ্গের স্কুলপাঠ্যে “আমি বাংলায় গান গাই” অন্তর্ভুক্ত |
মৃত্যুর পর কলকাতার রবীন্দ্রসদনে সরকারি স্তরে শ্রদ্ধান্জলি জানানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লিখেছেন: “বাংলার সঙ্গীতভাণ্ডারে এক অপূরণীয় ক্ষতি। প্রতুলদার গান প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উদ্বেলিত করবে।”
: সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “তিনি ছিলেন গণমানুষের কণ্ঠস্বর”।
: পশ্চিমবঙ্গ সরকার “প্রতুল মুখোপাধ্যায় সঙ্গীত পুরস্কার” চালু করার ঘোষণা দিয়েছে।
তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। “আমি বাংলায় গান গাই” গানটি এখনো বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে একতাবদ্ধ হওয়ার প্রতীক। ২০২২ সালে প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ অ্যালবাম “ভোর – অপ্রকাশিত গান” এখনও শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া জাগাচ্ছে।
মন্তব্য করুন