Prayagraj Kumbh Mela: উত্তরপ্রদেশ সরকার মহাকুম্ভ মেলার প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়াগরাজে একটি অভিনব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। মহাকুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণ থেকে প্রয়াগরাজ বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার পাশে ৮৪টি ‘আস্থা স্তম্ভ’ স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার ১৭ কোটি টাকা ব্যয় করছে।
আস্থা স্তম্ভের বিশদ বিবরণ
উত্তরপ্রদেশের নগরোন্নয়ন দফতরের তথ্য অনুযায়ী:
- স্তম্ভ সংখ্যা: ৮৪টি
- প্রতিটি স্তম্ভের নির্মাণ ব্যয়: প্রায় ২০ লক্ষ টাকা
- মোট প্রকল্প ব্যয়: ১৭ কোটি টাকা
- নির্মাণ সামগ্রী: রাজস্থানের বাঁশি পাহাড়পুর থেকে আনা লাল বালিপাথর
- স্তম্ভের উপরে: একটি করে ঘট বা কলস
- প্রতিটি স্তম্ভে খোদাই: শিবের ১০৮ নাম
Kumbh Mela 2025: আধ্যাত্মিক উৎসব যা কোটি মানুষের জীবন বদলে দেবে
আস্থা স্তম্ভের তাৎপর্য
উত্তরপ্রদেশের নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব অমৃত অভিজাত এই স্তম্ভগুলির ধর্মীয় ও দার্শনিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন:
- প্রতীকী অর্থ: প্রতিটি স্তম্ভ হিন্দু সনাতন ধর্মের শক্তির রূপ যোনির প্রকাশ।
- আধ্যাত্মিক মূল্য: একটি স্তম্ভ এক লক্ষ যোনির সমতুল।
- পরিক্রমার গুরুত্ব: ৮৪টি স্তম্ভ পরিক্রমা করলে ৮৪ লক্ষ যোনি পরিক্রমার সমান পুণ্য অর্জন হয়।
- দার্শনিক ব্যাখ্যা: এই পরিক্রমা প্রতীকীভাবে সৃষ্টির আদি অবস্থা পরিক্রমার সমতুল।
হিন্দু দর্শনে আস্থা স্তম্ভের গুরুত্ব
আচার্য মিথিলেশ নন্দানি শরণ আস্থা স্তম্ভের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:
- আত্মার যাত্রা: জীবন-মৃত্যুর অনন্ত চক্রে আত্মা নিজেকে ৮৪ লক্ষ বার পরিবর্তন করে।
- চার ভাগে বিভক্ত: এই পরিবর্তনের চক্র চার পুরুষার্থ (ধর্ম, অর্থ, কর্ম, মোক্ষ) এবং চার আশ্রম (ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস) অনুযায়ী বিভক্ত।
- বিশ্বাসের শক্তি: আত্মার এই যাত্রার মূল শক্তি হল বিশ্বাস বা আস্থা।
- প্রতীকী সংখ্যা: ৮৪টি স্তম্ভ আত্মার ৮৪ লক্ষ জন্মের প্রতীক।
মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫: প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা
মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫ উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশ সরকার বিস্তৃত প্রস্তুতি নিচ্ছে:
- মেলা শুরু: ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
- আস্থা স্তম্ভ নির্মাণ সমাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা: ৫ জানুয়ারি, ২০২৫
- প্রত্যাশা: লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীর আগমন
- উদ্দেশ্য: আধ্যাত্মিক অনুভূতি বৃদ্ধি ও ধর্মীয় পর্যটন উৎসাহিত করা
আস্থা স্তম্ভের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্তম্ভের সাথে উত্তরপ্রদেশের আস্থা স্তম্ভের তুলনা:
বিষয় | আস্থা স্তম্ভ (উত্তরপ্রদেশ) | স্বাধীনতা স্তম্ভ (বাংলাদেশ) |
---|---|---|
উচ্চতা | প্রায় ২০ ফুট | ১৫০ ফুট |
সংখ্যা | ৮৪টি | ১টি |
নির্মাণ ব্যয় | ১৭ কোটি টাকা (সম্পূর্ণ প্রকল্প) | ১৭৫ কোটি টাকা |
উদ্দেশ্য | ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক | ঐতিহাসিক ও জাতীয় |
অবস্থান | রাস্তার পাশে | সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে |
বৈশিষ্ট্য | শিবের নাম খোদাই | গ্লাস টাওয়ার, আলোকরশ্মি |
প্রকল্পের সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
আস্থা স্তম্ভ প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন মহলে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে:
- সমর্থকদের যুক্তি:
- ধর্মীয় পর্যটন বৃদ্ধি পাবে
- স্থানীয় অর্থনীতি উপকৃত হবে
- হিন্দু ঐতিহ্যের প্রচার হবে
- সমালোচকদের অভিযোগ:
- অপ্রয়োজনীয় ব্যয়
- ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন
- অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করা উচিত ছিল
ভোলে বাবার ‘চরণধূলি’তে রক্তের দাগ! হাথরাসে ১২৩ জনের মৃত্যুর পর কী হবে স্বঘোষিত ধর্মগু
উত্তরপ্রদেশ সরকারের আস্থা স্তম্ভ প্রকল্প হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্য ও দর্শনের এক অভিনব প্রকাশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার মহাকুম্ভ মেলাকে আরও আকর্ষণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে চাইছে। তবে এর পাশাপাশি এই বিপুল অর্থব্যয় নিয়ে প্রশ্নও উঠছে। যাই হোক, আগামী মহাকুম্ভ মেলায় এই আস্থা স্তম্ভগুলি নিঃসন্দেহে তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং প্রয়াগরাজের ধর্মীয় পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।