West Bengal Latest Weather Update: বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় নিম্নচাপের প্রভাবে গত রাত থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা ধরে এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম অংশে একটি নিম্নচাপ সক্রিয় রয়েছে। এই নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে আসছে এবং আরও শক্তিশালী হয়ে একটি অবদমনে (depression) পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের প্রধান এইচ আর বিশ্বাস জানিয়েছেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির অভাবে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে আর্দ্রতার মাত্রা কমে যাবে এবং তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক স্তরে ফিরে আসবে।”
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় গড়ে ২২২.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ১৯৩.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ১৩% কম। তবে আগামী কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে এই ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আগামী বুধবার ও বৃহস্পতিবার সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়া জেলায় রবিবার ও সোমবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। এই বৃষ্টিপাত বুধবার পর্যন্ত চলতে পারে।
এই ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নানা ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। শহরাঞ্চলে জলজমাট ও যানজট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে দীর্ঘদিনের খরার পর এই বৃষ্টি কৃষকদের জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে।
বৃষ্টির পাশাপাশি উচ্চ আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। রোববার রাতে কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪.৬ ডিগ্রি বেশি। উচ্চ আর্দ্রতার কারণে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও বেড়ে ৩৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা এই মাসের সর্বোচ্চ দিবাকালীন তাপমাত্রা।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের মধ্য অংশে একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে। এই সিস্টেমটি মঙ্গলবারের প্রথম দিকে একটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গ উভয় অঞ্চলেই বৃষ্টিপাতের প্রভাব পড়বে।
কলকাতায় মূলত বুধবার ও বৃহস্পতিবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতও হতে পারে। এই বৃষ্টিপাত শহরের বৃষ্টি ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে। আবহাওয়া দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলকাতায় মোট ২২২.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ১৯৩.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় দৈনিক গড় তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকবে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নিয়ে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় মোট ২৬৭.৪ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই বৃষ্টিপাত ২৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে হতে পারে। তাই নাগরিকদের ভেজা আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। জলজমাট এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কৃষকদের জন্য এই বৃষ্টি উপকারী হতে পারে। দীর্ঘদিনের খরার পর এই বৃষ্টি ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করবে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে জলমগ্নতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কৃষকদের সতর্ক থাকতে হবে।
শহরাঞ্চলে জলবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পৌর কর্তৃপক্ষকে জলনিকাশী ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নাগরিকদেরও অপ্রয়োজনীয় জলাশয়ে জল জমা না করার জন্য সচেতন থাকতে হবে।
মোটের উপর, আগামী কয়েকদিন পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া বৃষ্টিপ্রবণ থাকবে। এই পরিস্থিতিতে সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করে চলাচল করতে হবে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে এই বৃষ্টি কোনো বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে না বলে আশা করা যায়।