Health anxiety disorder: স্বাস্থ্য নিয়ে অযথা আতঙ্ক, ছোটখাটো উপসর্গকে বড় কোনো মারাত্মক রোগের লক্ষণ মনে করা—এটাই হলো হাইপোকনড্রিয়াসিস (Hypochondriasis)। এই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার ভাবেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ, যদিও ডাক্তারি পরীক্ষায় তেমন কিছু ধরা পড়ে না। ফলে, এই উদ্বেগ তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে তোলে, মানসিক কষ্ট বাড়ায় এবং আশেপাশের মানুষদেরও বিপাকে ফেলে।
হাইপোকনড্রিয়াসিস: সমস্যার গভীরে
কীভাবে বোঝা যায়?
হাইপোকনড্রিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত নিচের লক্ষণগুলোতে ভোগেন—
- সামান্য ব্যথা, মাথাব্যথা, পেট খারাপ, বা শরীরের অন্য কোনো স্বাভাবিক অনুভূতিকে মারাত্মক রোগের লক্ষণ মনে করা।
- সুস্থ থাকলেও সারাক্ষণ অসুস্থ হবার ভয়।
- শরীরের ছোটখাটো পরিবর্তন বা অস্বস্তিকে বড় রোগের ইঙ্গিত ধরে নেওয়া।
- গুগলে উপসর্গ খুঁজে বারবার নিজেকে রোগী হিসেবে কল্পনা করা।
- একাধিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া, বারবার টেস্ট করানো, তবুও সন্তুষ্ট না হওয়া।
- কখনো আবার, চিকিৎসকের কাছে যেতেই অনীহা—কারণ, ভয় আরও বাড়বে ভেবে।
এই উপসর্গগুলো যদি ছয় মাসের বেশি স্থায়ী হয়, তখনই একে হাইপোকনড্রিয়াসিস বলে ধরা হয়।
কেন হয়?
- অতীতের কোনো দুর্ঘটনা বা রোগের অভিজ্ঞতা
- পরিবারের কারও মারাত্মক অসুস্থতা দেখা
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুঃখ, বা স্ট্রেস
- শৈশবে পর্যাপ্ত যত্ন বা মনোযোগ না পাওয়া
- OCD, এংজাইটি বা ডিপ্রেশনের মতো মানসিক সমস্যা
পরিসংখ্যান ও বিস্তার
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫-৬% মানুষ হাইপোকনড্রিয়াসিসে আক্রান্ত। স্বাস্থ্যকর্মী বা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়—কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ২৮% পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিজ্ঞান শিক্ষার্থী হাইপোকনড্রিয়াসিসের উপসর্গে ভোগেন। নারী-পুরুষ উভয়েই আক্রান্ত হলেও নারীদের মধ্যে সামান্য বেশি দেখা যায়, তবে পার্থক্য খুব বেশি নয়।
হাইপোকনড্রিয়াসিসের প্রতিকার ও করণীয়
চিকিৎসা ও থেরাপি
কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT)
হাইপোকনড্রিয়াসিসের সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হলো কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি বা CBT। এই থেরাপিতে—
- রোগী তার চিন্তা ও অনুভূতির ভুল ব্যাখ্যা চিহ্নিত করতে শেখেন।
- স্বাস্থ্য নিয়ে অযথা আতঙ্ক কমাতে সহায়তা করা হয়।
- শরীরের স্বাভাবিক অনুভূতিকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার কৌশল শেখানো হয়।
- রিল্যাক্সেশন ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট শেখানো হয়।
ওষুধ
কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যখন উদ্বেগ বা ডিপ্রেশন খুব বেশি, তখন ডাক্তার সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিউপটেক ইনহিবিটর (SSRI) বা সেরোটোনিন-নরঅ্যাড্রেনালিন রিউপটেক ইনহিবিটর (SNRI) জাতীয় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট প্রেসক্রাইব করতে পারেন। ওষুধ ও থেরাপির সমন্বয়ে অনেকেই ভালো ফল পান।
মাইন্ডফুলনেস ও রিল্যাক্সেশন
- ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, গ্রাউন্ডিং এক্সারসাইজ
- প্রগতিশীল পেশী শিথিলকরণ
- নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটা
এসব কৌশল মানসিক চাপ কমাতে এবং স্বাস্থ্য-ভীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
Psychoeducation
হাইপোকনড্রিয়াসিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, নিজের অনুভূতি ও চিন্তার কারণ বোঝা এবং পরিবার-পরিজনকে বিষয়টি জানানো—এসবই প্রতিকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দৈনন্দিন জীবনে করণীয়
- স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য বা গুগল সার্চ কমানো
- নিজেকে ব্যস্ত রাখা, নতুন কিছু শেখা বা শখের কাজে মনোযোগী হওয়া
- পরিবারের সাথে খোলামেলা কথা বলা, সমর্থন চাওয়া
- প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া
সমর্থন নেটওয়ার্ক
পরিবার, বন্ধু, এবং মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের সমর্থন এই রোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকর। সামাজিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক বজায় রাখা মানসিক কষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
হাইপোকনড্রিয়াসিস কী—উপসংহার ও বাস্তব চিত্র
হাইপোকনড্রিয়াসিস (Hypochondriasis কী) কোনো অলীক ভয় নয়, বরং এক ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সময়মতো চিকিৎসা ও সহায়তায় নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিজের অনুভূতি ও চিন্তাকে গুরুত্ব দিন, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। স্বাস্থ্য-ভীতির অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব—শুধু দরকার সচেতনতা, সহানুভূতি, এবং সঠিক পদক্ষেপ।
আপনার স্বাস্থ্যই আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ। অযথা ভয় নয়, বরং সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসাই হোক সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।