Presidential rule in Bangladesh reasons: রাষ্ট্রপতি শাসন হলো একটি বিশেষ ব্যবস্থা যা কোনো রাজ্যের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়লে বা রাজ্য সরকার সংবিধান অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োগ করে থাকে। এই ব্যবস্থায় রাজ্যের নির্বাচিত সরকার বরখাস্ত করে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪১ক অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি শাসনের বিধান রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সাধারণত যখন কোনো রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, বা নির্বাচিত সরকার সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয় তখন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। এছাড়াও যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার কারণে রাজ্যের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা যেতে পারে।
২০০ বছরের শাসনের অবসান: কীভাবে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দিল
রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার প্রক্রিয়া নিম্নরূপ:
১. প্রথমে রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
২. কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বিষয়টি পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করে।
৩. রাষ্ট্রপতি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেন।
৪. এই ঘোষণাপত্র সংসদের উভয় কক্ষে অনুমোদনের জন্য পেশ করতে হয়।
৫. সংসদের অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রপতি শাসন কার্যকর হয়।
রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে রাজ্যের নির্বাচিত সরকার বরখাস্ত হয়ে যায়। রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য পরিচালনা করেন। রাজ্য আইনসভা স্থগিত বা ভেঙে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করে।
রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ সাধারণত ৬ মাস। তবে প্রয়োজনে এই মেয়াদ বাড়ানো যায়। সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাসন চালু রাখা যায়। এর পর অবশ্যই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করতে হয়।ভারতে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩৪ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে পুদুচেরিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। মণিপুর ও উত্তরপ্রদেশে সর্বাধিক ১০ বার করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে সর্বাধিক ১২ বছর ৯ মাস রাষ্ট্রপতি শাসন চলেছে।
হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়লে কী করবেন? জানুন জীবন বাঁচানোর গুরুত্বপূর্ণ টিপস
রাষ্ট্রপতি শাসনের সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। এর মাধ্যমে রাজ্যে সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। জরুরি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এর অপব্যবহারের আশঙ্কাও থাকে।
সুতরাং রাষ্ট্রপতি শাসন একটি জরুরি ব্যবস্থা যা শুধুমাত্র অত্যন্ত প্রয়োজনে ও সতর্কতার সাথে প্রয়োগ করা উচিত। এর মাধ্যমে রাজ্যের সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলা করা যায় বটে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি ও প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।