আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সারা রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে টাকিতে নাগরিকরা রাস্তায় নেমেছেন। গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) টাকিতে দুটি আলাদা মিছিলের আয়োজন করা হয়। একটি মিছিল টাকি রাজবাড়ী ঘাট থেকে শুরু হয়ে চৌরঙ্গী পর্যন্ত যায়, অন্যটি হাসনাবাদ থেকে শুরু হয়ে চৌরঙ্গী পর্যন্ত যায়। দুটি মিছিল একত্রিত হয়ে থুবোর মোড়ে জমায়েত করে এবং সেখানে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই মিছিলে শহরের পশ্চিম অংশের বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় মিছিলটি হাসনাবাদ থেকে শুরু হয়, যেখানে শহরের পূর্ব অংশের বাসিন্দারা যোগ দেন। দুটি মিছিলই চৌরঙ্গী অভিমুখে এগিয়ে যায়।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা হাতে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে এসেছিলেন।
তাদের দাবি ছিল:
দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি
হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা
চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা
মহিলাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা
দুটি মিছিল একত্রিত হয়ে থুবোর মোড়ে পৌঁছায়। সেখানে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় নাগরিক নেতা বলেন, “আমরা এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা দাবি করছি যাতে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয় এবং দোষীরা কঠোর শাস্তি পায়।”
মিছিলে অংশগ্রহণকারী অগ্নিজিতা চট্টোপাধ্ায় বলেন, “আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত। একজন মহিলা চিকিৎসকের সাথে এমন ঘটনা ঘটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা চাই যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”
অন্য এক অংশগ্রহণকারী প্রদীপ সরকার জানান, “শুধু প্রতিবাদ করলেই হবে না, আমাদের সচেতন হতে হবে। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের প্রতি সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
সরকারি প্রতিক্রিয়া
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে।”
সম্ভাব্য প্রভাব
এই ধরনের ঘটনা ও প্রতিবাদের ফলে নিম্নলিখিত প্রভাব পড়তে পারে:
হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হতে পারে
চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হতে পারে
মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেতে পারে
হাসপাতালে রোগী ও আত্মীয়দের আচরণ বিধি কঠোর করা হতে পারে
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে টাকি শহরে নাগরিকদের এই স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল প্রমাণ করে যে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এই ধরনের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নাগরিক সমাজের এই জাগরণ আশা করা যায় যে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সহায়ক হবে। তবে শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রয়োজন সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের শাস্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধান। সরকার, প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি নিরাপদ ও সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
মন্তব্য করুন