Nobel Prize winners revealed 2024: ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কারের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই বছর চিকিৎসাবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি এবং অর্থনীতি বিভাগে মোট ১৩ জন বিজ্ঞানী ও গবেষক এই সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগে এবারের পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যাম্ব্রোস এবং গ্যারি রুভকুন। তাঁরা মাইক্রো-আরএনএ আবিষ্কার এবং জিন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা নিয়ে গবেষণার জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। মাইক্রো-আরএনএ হল ছোট আরএনএ অণু যা জীবদেহে জিনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আবিষ্কার জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।পদার্থবিজ্ঞানে এবারের পুরস্কার পেয়েছেন জন হপফিল্ড এবং জেফ্রি হিন্টন। তাঁরা কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ও মেশিন লার্নিং-এর ক্ষেত্রে মৌলিক অবদানের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁদের গবেষণা আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা হান কাং পেলেন সাহিত্যে নোবেল: ‘The Vegetarian’-এর মাধ্যমে বিশ্বজয়!
রসায়নে এবারের পুরস্কার পেয়েছেন ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার। তাঁরা প্রোটিনের গঠন পূর্বাভাস ও ডিজাইনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁদের গবেষণা ওষুধ আবিষ্কার ও জৈব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।সাহিত্যে এবারের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরীয় লেখিকা হান কাং। তিনি ঐতিহাসিক ট্রমা ও মানব জীবনের নাজুকতা নিয়ে লেখা তীব্র কাব্যিক গদ্যের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর লেখায় সাংস্কৃতিক পরিচয়, ঐতিহাসিক আঘাত ও মানবিক অভিজ্ঞতার গভীর অন্তর্দৃষ্টি ফুটে উঠেছে।শান্তিতে এবারের নোবেল পুরস্কার পেয়েছে জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিও। এই সংগঠন হিরোশিমা ও নাগাসাকি পারমাণবিক বোমা হামলার বেঁচে যাওয়া মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে নিরলস প্রচারণা চালিয়ে আসছে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে।অর্থনীতিতে এবারের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দারন অ্যাসেমোগ্লু, সাইমন জনসন এবং জেমস এ রবিনসন। তাঁরা দেশের সমৃদ্ধির ওপর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রভাব নিয়ে গবেষণার জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁদের গবেষণা দেখিয়েছে যে, দুর্বল আইনের শাসন ও শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান থাকা দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
এবারের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ও গবেষক। এছাড়া যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের গবেষকরাও এই পুরস্কার পেয়েছেন। প্রতিটি বিভাগে পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনা বা প্রায় ১১ লাখ মার্কিন ডলার।নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসনোবেল পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করেন সুইডিশ রসায়নবিদ ও উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেল। ১৯০১ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। প্রথম দিকে পাঁচটি বিভাগে – পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে এই পুরস্কার দেওয়া হতো। পরে ১৯৬৮ সালে অর্থনীতি বিভাগে নোবেল পুরস্কার চালু করা হয়।গত ১২৩ বছরে মোট ৬২৭ বার ১০০৮ জন ব্যক্তি ও সংস্থাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯৭৩ জন ব্যক্তি এবং ২৭টি সংস্থা রয়েছে। কিছু ব্যক্তি একাধিকবার এই পুরস্কার পেয়েছেন। পদার্থবিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি ২২১ জন এই পুরস্কার পেয়েছেন। এরপর রয়েছে রসায়ন (১৯৩ জন), চিকিৎসাবিজ্ঞান (২২৪ জন), সাহিত্য (১১৯ জন), শান্তি (১০৯ জন) ও অর্থনীতি (৯২ জন)।দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি ৪০৫ বার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য (১৩৪ বার), জার্মানি (১১১ বার) ও ফ্রান্স (৭১ বার)। মহিলাদের মধ্যে মাত্র ৬১ জন এই পুরস্কার পেয়েছেন। সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন পাকিস্তানি শিক্ষা কর্মী মালালা ইউসুফজাই, যখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর।
নোবেল পুরস্কার: বর্তমান যুগে এর প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু? বিজ্ঞানীদের মতামত জানুন
নোবেল পুরস্কারের তাৎপর্যনোবেল পুরস্কার বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পুরস্কার পাওয়া গবেষক ও বিজ্ঞানীদের কাজ প্রায়শই মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের গবেষণা ও আবিষ্কার থেকে উদ্ভূত জ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।উদাহরণস্বরূপ, এবারের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের মাইক্রো-আরএনএ সংক্রান্ত গবেষণা জিন থেরাপি ও ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞানে পুরস্কৃত গবেষকদের কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে অবদান রেখেছে, যা বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।রসায়নে পুরস্কৃত গবেষকদের প্রোটিন গঠন সংক্রান্ত গবেষণা ওষুধ আবিষ্কার ও জৈব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সাহিত্যে পুরস্কৃত লেখকদের রচনা মানব অভিজ্ঞতার গভীরে প্রবেশ করে পাঠকদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। শান্তিতে পুরস্কৃত ব্যক্তি ও সংস্থাগুলো বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।অর্থনীতিতে পুরস্কৃত গবেষকদের কাজ দেশগুলোর অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে সহায়তা করে। সামগ্রিকভাবে, নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের গবেষণা ও কাজ থেকে উদ্ভূত জ্ঞান ও প্রযুক্তি মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।